প্রকাশ্যে ঘৃণাভাষণের জেরে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে সমাজে। এই মর্মেই এবার উদ্বেগ প্রকাশ করল খোদ সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সমাবেশে বক্তাদের ঘৃণাভাষণের পরেই শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ধর্ম সংসদের আসর থেকে প্রকাশ্যেই অন্য সম্প্রদায়ের উদ্দেশে ঘৃণা উগরে দিয়েছেন একাধিক বক্তা। যার জেরে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছিল মামলা। এদিকে এহেন ঘৃণাভাষণের আড়াল নিয়েই দেশজুড়ে হিংসামূলক ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে, এই মর্মে দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক ব্যক্তি। প্রায় একই ইস্যুর দুটি মামলার রায়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ঘৃণাভাষণ বন্ধ হওয়া দরকার। এর জেরে দেশের পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে বলেও মত আদালতের। গত বছরের ধর্ম সংসদের মতোই সম্প্রতি দিল্লিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সমাবেশে একাধিক বক্তা পরোক্ষে একটি সম্প্রদায়ের উদ্দেশে কার্যত হুমকি দিয়েছেন। আর তারপরেই সুপ্রিম কোর্টের এই অবস্থানকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও শুনুন: গরুকে ‘জাতীয় পশু’ ঘোষণার আরজি, ভর্ৎসনা করে মামলা নাকচ সুপ্রিম কোর্টের
গত বছর ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে এবং ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর হরিদ্বারে ধর্ম সংসদের আসর বসেছিল। সেখানেই একাধিক বক্তা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের ডসনা দেবী মন্দিরের প্রধান যতি নরসিংহানন্দ সরস্বতী ওরফে দীপক ত্যাগীর বিরুদ্ধে বারেবারেই উগ্র মুসলিম বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রাখা, মুসলিম মহিলাদের উদ্দেশে কুমন্তব্য করা বা হিন্দুদের হাতে অস্ত্র তুলে নিতে বলার মতো উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখার অভিযোগ উঠেছে। হরিদ্বারের ধর্মসংসদে তাঁর এহেন বক্তব্যের জেরে শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে বিজেপি-শাসিত উত্তরাখণ্ডের পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এই ইস্যুতে রুজু হওয়া মামলায় এবার পদক্ষেপ করল শীর্ষ আদালত। দিল্লি এবং হরিদ্বারের ধর্ম সংসদে বক্তাদের ঘৃণাভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চেয়ে দিল্লি ও উত্তরাখণ্ড সরকারের কাছে লিখিত জবাব তলব করেছে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চ। ঘৃণাভাষণ চলাকালীন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তাঁদের বিরুদ্ধে অবমাননার মামলা শুরুর আরজিও জানিয়েছেন মামলাকারী তথা সমাজকর্মী তুষার গান্ধী। এদিকে অন্য মামলাটিতে মামলাকারী এইচ মনসুখানি দাবি করেছেন, প্রকাশ্যে ঘৃণাভাষণের জেরে সামাজিক পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে। এই দাবিকে যথার্থ বলেই মনে করছে প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত এবং বিচারপতি এসআর ভাটের বেঞ্চ।
আরও শুনুন: স্কুলের মধ্যেই মাজার বানানোর নির্দেশ, আপত্তি সরস্বতী পুজোয়… মধ্যপ্রদেশে বরখাস্ত মুসলিম শিক্ষিকা
সম্প্রতি রাজধানী দিল্লিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভায় জগৎ গুরু যোগেশ্বর আচার্য প্রকাশ্যে হুমকি দেন, হাত কেটে, গলা নামিয়ে দেওয়ার। লাইসেন্সের পরোয়া না করে বন্দুক রাখারও পরামর্শ দেন সভার অন্য এক বক্তা, মহন্ত নওলকিশোর দাস। সমাবেশে যে বক্তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণের অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এফআইআর রুজু করা হয়েছে বলে খবর। এই পরিস্থিতিতে একইরকম ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল।