লোকসভা ভোটের আগে জাতশুমারির পক্ষে জোর সওয়াল তুলেছে কংগ্রেস। যদিও সে দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তথাকথিত জাত নিয়ে তিনি ভাবিত নন। তবে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন নয়া তকমার নামে জাতের কথা কিন্তু উঠছেই। প্রধানমন্ত্রীর GYAN-এর পালটা একাধিক নয়া ব্র্যান্ড হাজির করছেন বিরোধীরাও। শুনে নিন।
একদিকে বিজেপির নামে হিন্দুত্বের রাজনীতি করার অভিযোগে বারে বারে সরব বিরোধীরা। অভিযোগ, মুসলিম তো বটেই, দলিত বা পিছিয়ে পড়া মানুষদের ক্ষেত্রেও বিশেষ সহানুভূতি নেই গেরুয়া শিবিরের। আর এই বক্তব্যের ভিত্তিতেই জাতগণনার দাবিতে জোর সওয়াল করছেন রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেস নেতৃত্ব। জাতশুমারি করে সংরক্ষণের ব্যাপারে আরও তৎপর হতে হবে সরকারকে, এই মর্মেই চাপ বাড়াচ্ছেন তাঁরা। এমনকি কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সংরক্ষণের হার কী হবে, ইতিমধ্যেই তার ব্লুপ্রিন্টও হাজির করেছেন রাহুল। যদিও জাতশুমারির পথে হাঁটার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না বিজেপির মধ্যে। উলটে এই গোটা বিষয়টিকেই কার্যত নস্যাৎ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি বলেছেন, গরিব, যুবা, কৃষক ও নারীই দেশের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠী বা জাত, যাদের স্বার্থ রক্ষা ছাড়া অন্য কোনও জাত নিয়ে তিনি ভাবিত নন। আর এই চার গোষ্ঠীকে একটি নয়া তকমার আওতায় নিয়ে এসেছেন তিনি, ‘জ্ঞান’ (GYAN)। যার ‘জি’ হল গরিব, ‘ওয়াই’ হল যুবা, ‘এ’ হল অন্নদাতা বা কৃষক এবং ‘এন’ হল নারী।
আরও শুনুন:
মেয়েদের অপমান করে কী প্রাপ্তি হয় নেতাদের? প্রশ্ন সোনা মহাপাত্রের অথবা দেশেরই
দেখা যাচ্ছে, একা মোদি নন, ভোটের আগে বিরোধী দলের নেতারাও এমন এক-একটি তকমা চালু করছেন। স্পষ্ট করে জাতের কথা না বলে ওই নয়া নাম ব্যবহার করছেন তাঁরা। এই যেমন উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদব দাবি করছেন, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র বিরুদ্ধে লড়াই করবে পিডিএ। অখিলেশের পিডিএ-র ‘পি’ হল পিছড়া, ‘ডি’ হল দলিত বা তফশিলি জাতি এবং ‘এ’ হল অল্পসংখ্যক বা মুসলিম-সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। আবার বিহারে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা, লালু-পুত্র তেজস্বী সাফ বলছেন, বিহারে ‘বাপ’-কে ঠেকাতে পারবে না কেউ। এই ‘বাপ’ শব্দের ‘বি’ হল বহুজন, দুই ‘এ’-র প্রথমটি এসেছে এগ্রিকালচার অর্থাৎ কৃষক থেকে, দ্বিতীয় ‘এ’-র অর্থ আধা বা মহিলা এবং ‘পি’ মানে পুওর বা গরিব।
আরও শুনুন:
রামকে ‘পৌরাণিক’ বললে অপমান! শিক্ষিকাকে বরখাস্ত কি মগজে কারফিউ জারিরই চেষ্টা?
ভারতে বিভিন্নভাবে জাতের নামে রাজনীতির খেলা চলে বলেই জানান রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বিশেষ করে আঞ্চলিক দলগুলি যে অনেকাংশেই এই জাতপাতের তাস খেলে থাকে, এমনটাও বলা হয়। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, মোদির ‘জ্ঞান’ অ্যাজেন্ডা সেই জাত-রাজনীতিকেই অনেকটা দুর্বল করে দিয়েছে। আর তাই কেবলমাত্র একেকটি জাতের উপর জোর দেওয়ার বদলে বৃহত্তর ভাবে গরিব কিংবা পিছড়ে বর্গের কথা বলছেন সব নেতারাই। আর সেই কারণেই ভোটের আগে রাজনৈতিক মহলে হাজির হচ্ছে পিডিএ কিংবা BAAP-এর মতো নয়া ব্র্যান্ডনেম।