কোটি টাকার গয়নায় সাজবেন বিঘ্নহর্তা। তাই আগেভাগে মূর্তির জন্য বিমা করাতে ব্যস্ত মুম্বইয়ের একাধিক পুজো কমিটি। সম্প্রতি ৩৬০ কোটির বিমা করে তাক লাগাল এমনই এক গনেশ পুজো আয়োজক সংস্থা। ঠিক কোন কোন বিষয়ে সুরক্ষা দেবে এই কোটি টাকার বিমা? আসুন শুনে নিই।
হিসাবমতো পুজো একদিনের। কিন্তু গণেশ আরাধনায় দশ দিনের জন্য সেজে ওঠে মুম্বই। এবারেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বানিজ্য নগরীর গনেশ পুজোর উন্মাদনা দেখতে গোটা দেশের মানুষ মুখিয়ে থাকেন। একদিকে যেমন বিশালাকায় মূর্তি, অন্যদিকে তেমনই রাজকীয় শোভাযাত্রার আয়োজন। সব মিলিয়ে গনেশ পুজোর মুম্বই যেন কলকাতার দুর্গাপুজোকেও টেক্কা দেয়।
আরও শুনুন: গণেশ চতুর্থী উপলক্ষে বেঙ্গালুরুতে বন্ধ মাংসের দোকান, নয়া নির্দেশিকা জারি প্রশাসনের
প্রায় প্রতিটি পুজোর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্য। কোথাও দেখা মেলে হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির, কোথাও রয়েছে প্রাচীনত্বের ছোঁয়া। আর সেইসঙ্গে রয়েছে বিগ্রহকে সাজানোর ধূম। বেশিরভাগ মন্ডপেই গণেশকে বহুমূল্য গয়নায় সাজানোর চল রয়েছে। স্রেফ সোনা রুপো নয়, মূর্তিতে হীরের মুকুট কিংবা আরও দামি রত্নও দেখা যায়। বেশিরভাগই ভক্তদের দান করা। সেইসঙ্গে মন্দির কমিটির নিজস্ব সমম্পত্তিও রয়েছে। তাই পুজোর ওই কটা দিন নিরাপত্তার দিকেও বিশেষ খেয়াল রাখতে হয় আয়োজকদের। সেই খাতেই এবার ৩৬০ কোটির বিমা করাল গিএসবি সেবা মণ্ডল। মুম্বইয়ের জনপ্রিয় পুজোগুলির মধ্যেই এই পুজো অন্যতম। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ বিশাল মূর্তি। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিগ্রহের গায়ে পরানো ভারী ভারী গয়না। তাই নিরাপত্তার খেয়াল আগে থেকে না রেখে উপায় নেই। এবছর স্রেফ গয়নার জন্য ৩৮.৪৭ কোটির বিমা করেছে ওই কমিটি। ৩০ কোটির বিমা মণ্ডপ ও আগত দর্শনার্থীদের সুরক্ষার উদ্দেশে করা হয়েছে। এছাড়া ২ কোটির বিমা হয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে। এত বিশালাকায় মূর্তি ভূমিকম্প কিংবা ভারী বৃষ্টিতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। শুধু তাই নয়, মূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হলে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে আশেপাশে থাকা মানুষজনেরও। সেইসঙ্গে বিরাট মাপের আর্থিক ক্ষতি তো রয়েছেই। সেই সব কিছু মাথায় রেখেই বিমার সবথেকে বড় অংশটি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি গনেশ পুজোর ওই কদিন মণ্ডপে ভিড়ও থাকবে ভালমতোই। প্রতি বছর সেই ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। তবুও অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই বিমার আওতাও রয়েছে এই বিষয়টিও। সব মিলিয়ে স্রেফ দুর্ঘটনার জন্যই রয়েছে ২৮৯.৫০ কোটির বিমা। আয়োজকদের দাবি প্রতিবছর এইভাবে গনেশপুজোর আগে বিমার ব্যবস্থা করতে হয় তাঁদের। এতে মানসিকভাবে অনেকটা বল পান তাঁরা। তবে এবার সেই বিমার পরিমাণ যথেষ্টই বেড়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
আরও শুনুন: ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’, হিন্দু ও মুসলিম মিলেই গণেশ পূজার আয়োজন কর্ণাটকে
শুধু ওই একটি কমিটি নয়। গনেশপুজো উপলক্ষে অন্যান্য কমিটিও করেছে মোটা টাকার বিমা। বিখ্যাত লালবাগ গনেশ পুজোর জন্য বিমা করা হয়েছে ৭ কোটি টাকার। পরিচালন সমিতির দাবি এর জন্য ১ লক্ষ টাকা প্রিমিয়াম দিতে হবে তাঁদের। তবু সুরক্ষার খাতিরে এই টাকা খরচ না করে উপায় নেই। এ বছর প্রায় ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক মণ্ডপ সামলানোর দায়িত্বে থাকবেন। তাঁদের প্রত্যেকের জন্যই থাকবে বিমার ব্যবস্থা। কোনওভাবে দুর্ঘটনা ঘটলে যে আর্থিক দিক দিয়ে অসুবিধায় না পড়তে হয়, তার জন্য আগাম সব ব্যবস্থা করে রাখছে এই কমিটিগুলি।