একটা ভয়ঙ্কর রেকর্ড হতে চলেছে আফ্রিকায়। বিশ্ব উষ্ণায়ণের জেরে আফ্রিকার একটি পর্বতমালার সবকটি হিমবাহ গলে যেতে বসেছে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী দুই দশকের মধ্যে আফ্রিকার একাধিক বড় হিমবাহ নিশ্চিহ্ন হবে। তারপর কী পরিণতি হবে আফ্রিকার? কত বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে চাঁদের পাহাড়ের মহাদেশ?
বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড়ের গায়ে জমে থাকা অলৌকিক তুষার গলে যাচ্ছে রকেট গতিতে, মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোর আগ্নেয়গিরি ঢেকে রাখত যে বরফের চাদর, ঝটপট নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে তাও। জ্ঞানপাপী আমরা অবশ্য সবজান্তা! জানি তো… শান্ত, সুন্দর, রৌদ্রকরোজ্জ্বল পৃথিবী ক্রমশ স্বপ্ন হয়ে উঠছে। অপরপক্ষে ভয়ঙ্কর সমুদ্রঝড়, জঙ্গলে জঙ্গলে দাবানল, গ্রীষ্মে রেকর্ড ব্রেক করা উষ্ণতা, বছরভর ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যার দুঃস্বপ্নই পৃথিবীর স্বাভাবিক চরিত্র হয়ে যাচ্ছে। তবে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে সেমিনার-টেমিনার হয় মাঝে মাঝে। কিন্তু ওই অবধিই। ফলে নিঃশব্দে নীরবে গলে যাচ্ছে কত পাহাড়ের কত কত হিমবাহ। নতুন দুঃসংবাদ হল, আফ্রিকার বেশ কয়েকটি হিমবাহ আগামী দুই দশকের মধ্যেই ‘নেই’ হয়ে যাবে।
আরও শুনুন: বয়স ৭০, তাতে কী! সকলকে অবাক করে সন্তানের জন্ম দিলেন বৃদ্ধা
ওয়ার্ল্ড মেট্রোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন জানিয়ে দিয়েছে, আফ্রিকার তিনটি বড় পর্বতের গ্লেসিয়ার বা হিমবাহ মৃত্যুপথযাত্রী। তারা ২০৪০ সালের মধ্যেই সম্পূর্ণ গলে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো, মাউন্ট কেনিয়া ও রুয়েনজোরি পর্বতমালার হিমবাহগুলি। আবহাওয়াবিদদের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে অতি দ্রুত গতিতে গলতে শুরু করেছে তিনটি হিমবাহই। পরিস্থিতি ইতিমধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিলিমাঞ্জারোর সবচেয়ে বড় হিমবাহ ফার্টওয়াঙ্গলারের ৭০ শতাংশ গলে গিয়েছে ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে। অন্য দিকে রুয়েনজোরির হিমবাহের ৯০ শতাংশ ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয়দের কাছে এই পাহাড়েরই অন্য নাম ‘মাউন্টেন অব মুন’, বিভুতিভূষণের ‘চাঁদের পাহাড়’।
আরও শুনুন: পুরোনো ফ্রিজের মধ্যেই হাজির আস্ত লাইব্রেরি, কলকাতায় বই পড়ার নতুন ঠিকানা
কিছুদিনের মধ্যে একই পরিণতি হবে মাউন্ট কেনিয়ার হিমবাহগুলিরও। মাউন্ট কেনিয়ার সবকটি হিমবাহ গলে গেলে, একটা রেকর্ড হবে। আনন্দের না, দুঃখের রেকর্ড। সেক্ষেত্রে মাউন্ট কেনিয়াই হবে প্রথম পর্বতমালা, যে পর্বতমালার সমস্ত হিমবাহ মুছে যাবে মানব সভ্যতার দান বিশ্ব উষ্ণায়নের থাবায়। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে সতর্ক করছেন, যদি আগামী দু-দশক বাস্তবেই সবকটি হিমবাহ গলে যায়, তবে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশ। বন্যাকবলিত হবে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ডুবে যাবে নিচু এলাকা। নদীর প্লাবনে বহু শহরেও ঢুকবে জল। শুধু তাই নয়, এর ফলে জলবায়ুর বড়সড় পরিবর্তনের মুখে পড়বে এই মহাদেশ। যার প্রভাব পড়বে গোটা পৃথিবীতে।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের এই সতর্কবার্তার পরে আফ্রিকার ৪২টি দেশ কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই এখন দেখার। যদিও যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে। তবুও কি টনক নড়বে আমাদের? আমরা কি ব্যবসা, যুদ্ধ ও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম সংক্রান্ত ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের কথা, মানে প্রকৃতির কথা ভাবব এবার?