পর্যটকদের সামনে নাচতে হবে ছাত্রীদের। এই মর্মে নির্দেশ এসেছে খোদ স্কুল থেকে। শুধু তাই নয়, সেই নির্দেশ মানার জন্য রীতিমতো চাপ দেওয়া হচ্ছে ওই কিশোরীদের উপর, যাদের মধ্যে অনেকেই আদিবাসী। এহেন অভিযোগেই সম্প্রতি সরগরম মহারাষ্ট্রের নাসিক। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘দ্য আদিবাসী উইল নট ডান্স’, অর্থাৎ আদিবাসীরা নাচবে না। এই নামে বই লিখে সরকারের কোপে পড়েছিলেন হাঁসদা শৌভেন্দ্রশেখর। বিভিন্ন পর্যটন স্থানে আদিবাসী নৃত্য দেখতে মানুষের ভিড় জমে, কিন্তু সাধারণভাবে মানুষের কাছে, সমাজের কাছে, এমনকি সরকারের কাছেও আদিবাসীদের অবস্থান কী, কতটুকু সুযোগ সুবিধা বা সম্মান মেলে তাদের, গল্পের মধ্যে দিয়ে এইসব প্রশ্নই তুলে ধরেছিলেন লেখক, যিনি নিজেও জন্মসূত্রে একজন আদিবাসী। কিন্তু যতই কথা হোক, আদিবাসীদের অবস্থা যে সত্যিই বিশেষ পালটায়নি, তারই যেন প্রমাণ মিলল ফের। পর্যটকদের সামনে নাচতে বাধ্য করা হচ্ছে ছাত্রীদের, এমনই অভিযোগ উঠল মহারাষ্ট্রের এক স্কুলের কর্ণধারের বিরুদ্ধে। স্কুলের পাশাপাশি একটি রিসর্টও চালান ওই ব্যক্তি। আর সেই রিসর্টে আসা পর্যটকদের সামনেই স্কুলের কিশোরী ছাত্রীদের নাচ দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।
আরও শুনুন: দু’বছর ধরে আস্তানা পাঁচতারা হোটেলে, ৫৮ লাখের বিল না মিটিয়েই চম্পট যুবকের
জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের নাসিকে। সেখানকার ত্র্যম্বকেশ্বর অঞ্চলের পাহিন গ্রামের একটি স্কুলেই এমন অভিযোগ উঠেছে। স্কুলের সঙ্গে রয়েছে একটি হোস্টেলও, যেখানে থাকে আবাসিক ছাত্রীরা। আর সেই ছাত্রীদের কয়েকজনকেই এহেন নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, তাদের ওই নির্দেশ মানার জন্য রীতিমতো জোর করা হয়, এমনটাই অভিযোগ সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী। সে নিজের পরিবারে বিষয়টি জানাবার পরেই সরাসরি পুলিশের দ্বারস্থ হয় তার পরিবার। এই অভিযোগের ভিত্তিতে স্টেট ট্রাইবাল কমিশনের তরফে একটি দলও স্কুলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি কাউকেই।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বেসরকারি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলটি চালায় সর্বহারা পরিবর্তন কেন্দ্র। আদিবাসী মানুষেরা, যাদের বড় অংশের কাছেই এখনও সেভাবে সুযোগ সুবিধা পৌঁছয় না, তাদের শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার জন্যই ওই স্কুল, এমনটাই জানা গিয়েছে। কিন্তু আদতে কি তাদের অবস্থার পরিবর্তন করার কথা ভাবা হচ্ছে, নাকি তাদের আটকে রাখা হচ্ছে পুরোনো গণ্ডিতেই, প্রশ্ন এখানেই। আদিবাসীদের কাছে নাচ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ হলেও, বর্তমানে ধনী সম্প্রদায়ের অনেকের কাছে তা একরকমের বিনোদন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই মনোভাবকেই কাজে লাগিয়ে এই নাচের সঙ্গে নারীশরীর প্রদর্শনকেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে একভাবে। বলাই বাহুল্য, এক্ষেত্রে মেয়েদের কার্যত পণ্য করেই তোলা হয়। যে কিশোরীরা পড়াশোনা করে সেই অবস্থাকে পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, এমন ঘটনা আসলে তাদের সেই চেষ্টাকেই নাকচ করতে চায়। এই ঘটনার জেরে তাই প্রতিবাদে সরব হয়েছে স্টেট ট্রাইবাল কমিশনও।