যুদ্ধবিরতির পর প্রথম রমজান পালন করছে গাজা। তবে একা একা নিজেদের বাড়িতে নয়। রাস্তায় নেমেছে শহর, একসঙ্গে ইফতার পালন করেছেন তাঁরা। আর সেই ছবি ঘিরে নেটদুনিয়ায় নতুন চর্চা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
চারিদিকে ধ্বংসচিহ্ন। ধুলোয় মেশা হাহাকার। ভাঙা দেওয়ালে কান পাতলে শোনা যাবে শিশুর কান্না। তীব্র বারুদের গন্ধ এসে ঠেকছে নাকে। তারই মাঝে একফালি সরু রাস্তা। সেখানে পর পর পাতা হয়েছে একের পর এক টেবিল। আকারে বেশ ছোট, তবে সংখ্যায় অনেক। উপর থেকে দেখে মনে হবে সরু বেঞ্চ পাতা আছে রাস্তার মাঝ বরাবর। তারই দু’পাশে সার দিয়ে বসেছেন সবাই। সংখ্যায় অন্তত শ-তিনেক। সবাই একসঙ্গে কিছু একটা খাচ্ছেন। কোন উপলক্ষ তা ছবিতে স্পষ্ট নয়। তবে এই ছবি কোন স্থানের, তা অনায়াসে বলা যায়!
ঠিক ধরেছেন, ধ্বংসচিহ্ন ঘেরা শহর বলতে যে জায়গার কথা সবার আগে মনে আসে, এই ছবি সেই গাজার! সম্প্রতি নেটদুনিয়ায় বেশ চর্চা চলছে ছবিটি নিয়ে। আসলে, ছবিতে যে খাওয়ার দৃশ্য দেখা গিয়েছে তা রোজা ভঙ্গের। পবিত্র রমজান মাসে গোটা বিশ্বের মুসলিমরা যে রোজা রাখছেন, তাতে শামিল হয়েছে গাজাও। তবে নিজেদের মতো ঘরে বসে নয়, সকলে মিলে রাস্তায় নেমে এসেছেন তাঁরা। এভাবেই যেন গোটা বিশ্বকে তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন বেঁধে বেঁধে থাকার মানে।
যুদ্ধ বরাবরের সর্বনাশা! তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সাধারণ মানুষের। বর্তমান বিশ্ব যে কয়েকটি যুদ্ধের বীভৎসতার সাক্ষী থাকল, ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাত তার মধ্যে অন্যতম। আর সেক্ষেত্রে গাজার নাম না করলেই নয়। সেই ২০২৩-এর অক্টোবরে যুদ্ধের আগুন যখন ছড়িয়ে পড়ল, তখন থেকেই গাজার মানুষ ঘর ছাড়া। রাতদিন মাথার উপর চক্কর কেটেছে বোমারু বিমান। চারিদিকে যে ধ্বংসলীলা, তাতে নিজেরা আদৌ বেঁচে থাকবেন কি-না সেই নিয়ে সংশয় ছিল প্রত্যেকের। কেউ ফিরেছেন, কেউ ফেরেননি। চোখের সামনে পরিবারের প্রিয় পরিজনদের মৃত্যু দেখেছে গাজা। তবে দুর্যোগের মেঘ কোনও দিন যে কাটবে, এই প্রায় বৃথা আশাটুকুই ছিল তাঁদের একমাত্র সম্বল। সময় লাগলেও সেই আশা পূরণ হয়েছে। যুদ্ধবিরতিতে এখন তাঁরা ফিরছেন তাঁদের প্রিয় ভূমিতে। ঘরে। সেই ঘর, যা আর ঘর নেই। তাই রমজান পালনের জন্যও রাস্তাকেই বেছে নিয়েছেন গাজার বাসিন্দারা।
সোশাল মিডিয়ায় প্রতিদিন কিছু না কিছু ভাইরাল হয়। কখনও একাধিক। সব কিছুর যে বিশেষ গুরুত্ব থাকে, তা নয়। বরং ভাইরালের ভিড়ে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের বাড়বাড়ন্তই বেশি। তবে গাজার রমজান পালনের ছবি কোনওভাবেই অপ্রাসঙ্গিক নয়। গত বছরও শান্তির মাস রমজানেও গুলির শব্দ শুনছে গাজা। উপবাসের জন্য আর রোজার প্রয়োজন ছিল না, খিদে আর অনাহারই তখন তার দিনলিপি ছিল। মনে পড়ে যায়, ইব্রাহিমের কথা। সেই যুবক, যিনি মায়ের কবরের পাশে বসে রমজান শুরু করেছিলেন। সেই ছবিও ঘুরেছিল নেটদুনিয়ায়। তাতে কোনও আশার আলো খুঁজে পাননি কেউ। আবারও ইফতার উদযাপনে শামিল হতে পারবে গাজা, এমনটা মোটের উপর কেউই ভাবতে পারেননি। তবে এবারে যে ছবিটি আলোচনায়, তা আশার আলো জাগাতেই পারে। তাতে ধ্বংসচিহ্ন যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে একসঙ্গে বেঁধে বেঁধে থাকার বার্তাও। যুদ্ধের হুংকারে যেখানে মানুষের বেঁচে থাকাটুকুই বড় সংকটে, সেখানে মানুষ বোধহয় বুঝেই নেন যে, ঈশ্বরের কাছেও তাঁদের অসহায়তার কোনও উত্তর মেলা ভার। তবে অসহায়তা নয়, এবার অন্তত শান্তির মাস হয়েই এবার রমজান এসেছে যুদ্ধের শহরে।