গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইজরায়েলে ব্যবসা করা বহুজাতিক সংস্থাগুলি, বিশেষ করে খাদ্য-পানীয় সংস্থাগুলির ব্যবসায় ধাক্কা লেগেছে। কোকাকোলা বয়কটের ডাক উঠেছে একাধিক জায়গায়। আর সেইখানেই বাজার টানছে গাজা কোলা। গণহত্যাবিরোধী পণ্যের তকমা নিয়েই যা সাড়া ফেলেছে।
পুঁজির সঙ্গেই অঙ্গাঙ্গি যোগ কোকা কোলার। সে কারণেই এই ঠান্ডা পানীয়ের দিকে নানা সময়েই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মানবতাবাদীরা। সাম্প্রতিক কালে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধের আবহ সেই অভিযোগকে নতুন করে উসকে দিয়েছে। ইজরায়েলে ব্যবসা করার সুবাদে ইজরায়েলের হত্যালীলাকে সমর্থন করছে তারা, এই অভিযোগে বিশ্ববাজারে নানা স্থানে বয়কটের ডাক শুনতে হয়েছে এই সংস্থাকে। সেই পরিস্থিতিতেই এবার বাজারে এল নতুন কোলা ব্র্যান্ড। যার নাম গাজা কোলা। গাজার সঙ্গে নাম জুড়ে নিয়ে যে নতুন ব্র্যান্ড চালু হয়েছে, পুঁজির পক্ষে সওয়াল করার বদলে তা যেন মানবতার কথাই বলতে চাইছে এবার।
যুদ্ধের গাজায় এখন বারুদ আর খিদের গন্ধই একমাত্র সত্যি। লাগাতার বোমাবর্ষণ, রকেট হামলায় গাজার শয়ে শয়ে মানুষ মুহূর্তেই নাম হারিয়ে এক-একটা সংখ্যা হয়ে গিয়েছেন। রাজনীতি আর রাষ্ট্রনীতির যুদ্ধে তাঁদের সব অস্তিত্ব মিথ্যে হয়ে গিয়েছে রোজ। রাষ্ট্রের যুদ্ধ কেড়ে নিচ্ছে অগণিত শিশুদেরও। আর এই গণহত্যার বিপক্ষে, যুদ্ধের বিরুদ্ধেই কথা বলছেন গোটা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষেরা। রাষ্ট্রের নিজস্ব হিসেবনিকেশের দাম সাধারণ মানুষকে কেন চুকাতে হবে, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। আর সেই কারণেই, গাজার দিকে লাগাতার আক্রমণ শানানো ইজরায়েলে যে সংস্থাগুলি ব্যবসা করছে, তাদের প্রতিও তাঁরা একইভাবে বিরক্ত। তাঁদের মতে, বাণিজ্যের সূত্র ধরে আসলে ইজরায়েলকে সহযোগিতা করা হচ্ছে, বা ঘুরিয়ে গাজা গণহত্যাকেই সমর্থন জোগানো হচ্ছে। ফলে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইজরায়েলে ব্যবসা করা বহুজাতিক সংস্থাগুলি, বিশেষ করে খাদ্য-পানীয় সংস্থাগুলির ব্যবসায় ধাক্কা লেগেছে। কোকাকোলা বয়কটের ডাক উঠেছে একাধিক জায়গায়। আর সেইখানেই বাজার টানছে গাজা কোলা। গণহত্যাবিরোধী পণ্য তকমা নিয়েই যা সাড়া ফেলেছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে এই গাজা কোলা তৈরি করেন ওসামা কাশু নামের এক ফিলিস্তিনি ব্যক্তি। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন রেস্তরাঁয় এই বিশেষ পানীয় রাখা হচ্ছে। যার ক্যানগুলি প্যালেস্তাইনের পতাকার ধাঁচে লাল-সবুজ-কালো রঙে সাজানো। ক্যানগুলোর গায়ে ঐতিহ্যবাহী কেফিয়ে নকশার সঙ্গেই আরবি ক্যালিগ্রাফিতে লেখা আছে ‘গাজা কোলা’। জানা যাচ্ছে, এই গাজা কোলা বিক্রির লাভের টাকা যাবে প্যালেস্তাইনের হাসপাতালগুলি সারিয়ে তোলার জন্য। হামাস-ইজরায়েলের যুদ্ধে গাজার হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির কিছুই রেহাই পায়নি। সেই বিধ্বস্ত হাসপাতালগুলি পুনর্নির্মাণের কাজেই এই লাভের টাকা ব্যয় করার কথা জানানো হয়েছে। এর আগে, ২০০২ সালে মার্কিন পুঁজির বিরোধিতা করেই ফ্রান্সে এসেছিল মেকা কোলা। এবার, সেই একইভাবে বিদ্রোহের নিশান হয়ে দেখা দিল গাজা কোলা।