তালিবানের নৃশংসতার জলজ্যান্ত উদাহরণ হয়ে বেঁচে আছেন খাতেরা হাশমী। গায়ে অজস্র ছুরির আঘাত, মাথায় বুলেটের ক্ষত নিয়ে অন্ধ হয়ে যাওয়া খাতেরা, প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছিলেন। যদিও তাঁর সন্তানরা এখনো রয়েছে ত্রাসের দেশ আফগানিস্তানেই।
আফগানিস্তান পুলিশে চাকরি করতেন খাতেরা। তালিবান, আফগানিস্তান দখল নেওয়ার পরই তাদের অলিখিত হুলিয়ার শিকার যে তাঁকেও হতে হবে, আর সেটা এত তাড়াতাড়ি, এত নৃশংসভাবে হতে হবে, ভেবে উঠতে পারেননি খাতেরা।
একদিন ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার পথে, রাস্তার পাশে ঘাপটি মেরে থাকা ৩ জন তালিবান জঙ্গী তাঁকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তুলে নিয়ে যায়। কারন। তালিবানের চোখে ক্ষমা বলে কিছু হয় না। খাতেরার অপরাধ, মহিলা হয়ে তিনি বাড়ির বাইরে পা রেখেছিলেন। তায় আবার চাকরি করতে গিয়েছিলেন। শাস্তিস্বরূপ কট্টরপন্থী জেহাদীরা খাতেরাকে প্রায় ১০ বার ছুরি দিয়ে কোপায়। একাধিক গুলিও করা হয়েছিল তাঁকে যার একটা তাঁর মাথায় লাগে। এতেও জেহাদীদের মনে হয় তাকে ‘যথেষ্ট’ শাস্তি দেওয়া হয়নি। তাই তাঁর চোখ দুটোও খুবলে নেয় তারা। ওই সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন খাতেরা।
আরও শুনুন: আফগানিস্তানে অশান্তি ঘটাতে চাইলে পরিণতি হবে পঞ্জশিরের মতো, কড়া হুঁশিয়ারি তালিবানের
তবে এখানেই চমক শেষ নয়। মৃতপ্রায় খাতেরা যখন হাসপাতালে পৌঁছন তখন তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল এক প্রবল মানসিক আঘাত। খাতেরা জানতে পারেন তাঁর বাবা, তালিবানদের সঙ্গে যুক্ত। মেয়ের সঙ্গে যে এই নারকীয় অত্যাচার হতে চলেছে আগে থেকেই জানতেন খাতেরার আব্বু। তা সত্ত্বেও মেয়েকে সাবধান করেননি! রক্ষা করা তো দূর অস্ত।
বেঁচে থাকার মরিয়া ইচ্ছা খাতেরাকে নিয়ে এসে ফেলে ভারতে। ভারতে, উন্নততর চিকিৎসা পরিষেবায় তিনি এখন নিরাপদ কিন্তু তাঁর কথায় – ‘লাশের মত বেঁচে আছি। সন্তানদের জন্য আতঙ্কে আছি এখনও। তারা এখনও আফগানিস্তানেই আছে। রোজ জেহাদীরা এসে তাদের শাসিয়ে যায়- খাতেরার খোঁজ না দিতে পারলে তাদের শেষ করে দেবে বলে।’
আরও শুনুন: মহিলাদের মৃতদেহের সঙ্গেও সঙ্গম তালিবানদের, বিকৃত যৌনতায় ছড়াল চাঞ্চল্য
খাতেরা হাশমী এখন তালিবানীদের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। প্রথমবার, জীবন্ত লাশ করে ছেড়েছে। আর একবার হাতে পেলে… আর কি কি বীভৎস সাজা তাকে দেবে জানা নেই। তবে দুরুদুরু বুকে, কাঁপা কাঁপা হাতে, টুঁটি চেপে ধরা স্বরেও বলে যেতে হবে – যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। একটা পৃথিবী চাই মায়ের আঁচলের মতো।