মৃতের কোনও ধর্ম হয় না। অনেকেই বিশ্বাস করেন এ-কথা। যতক্ষণ প্রাণ আছে, ততক্ষণ সজাগ মানুষের ধর্মভাবনা। মৃত্যুর পর তা আর কোথায়! তা সত্ত্বেও ভিন্ন ধর্মের মৃত মানুষদের জন্য ভিন্ন রীতি ও ভিন্ন জায়গায় সৎকারের রীতিই এতদিন ধরে প্রচলিত। এবার সেই বিভেদ মুছে একটিই সৎকার স্থানের ভাবনা বাস্তবায়িত হল দেশে। আসুন শুনে নিই।
ধর্মবিশ্বাস আলাদা। তবু বেঁচে থাকতে সকলে মিলেমিশেই তো থাকেন। বিভিন্নতার মধ্যে এই একতাই আমাদের দেশের বৈশিষ্ট্য। ধর্মনিরপেক্ষ দেশ প্রত্যেককে আলাদা ধর্মাচরণের স্বাধীনতা দিয়েছে। আবার সব ধর্মের মানুষকে সহাবস্থানের সুযোগও করে দিয়েছে। প্রাণ থাকতে যদি এই একতা দেখা যায়, তবে মৃতের গতি কেন আলাদা জায়গায়? কেন সকল ধর্মের মানুষের মৃত্যুই এক গন্তব্যে এসে শেষ হতে পারে না! এই ভাবনা থেকেই এবার ছক ভাঙা উদ্যোগ হায়দরাবাদের। হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টানদের জন্য সেখানে বেছে নেওয়া হল একটাই সৎকার স্থান। অর্থাৎ সকল ধর্মের মৃতের সৎকারই করা যাবে সেই জায়গায়।
আরও শুনুন: ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কোনও ধর্মগুরু ‘পরমাত্মা’ নন, অনুকূলচন্দ্রকে নিয়ে আবেদন খারিজ শীর্ষ আদালতের
অভিনব এই আয়োজন হায়দরাবাদ মেট্রোপলিটান ডেভলপমেন্ট অথরিটির। প্রায় সাড়ে ছ-একর জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছে এই সৎকার স্থান। যেখানে তিন ধর্মের মানুষদের সৎকারের আলাদা আলাদা জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটিই সম্পন্ন হবে একই প্রাঙ্গণের মধ্যে। জানা গিয়েছে, যে জায়গায় বর্তমানে এই সৎকার-স্থান, সেখানে আগে জঞ্জাল ফেলা হত। নির্মাণ কাজের পর অব্যবহৃত বহু জিনিস এখানে ফেলে রাখা হত। সেই স্তূপ সরিয়ে জায়গাটিকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। প্রতি ধর্মের সৎকার-স্থানের জন্য, আলাদা আলাদা করে অফিস তৈরি করা হয়েছে। অন্যান্য ব্যবস্থার পাশাপাশি আছে প্রার্থনা করার জায়গাও। হিন্দুদের শ্মশান অংশটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মুক্তি-ঘাট’। আড়াই একর জায়গা জুড়ে তৈরি এই শ্মশানে আছে দুটি বৈদ্যুতিক চুল্লি। এ ছাড়া দাহ পরবর্তী সময়ের পারলৌকিক ক্রিয়ার জন্যও আলাদা জায়গা ও ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঠিক এর পাশেই আছে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের জন্য কবরস্থান। প্রতি ক্ষেত্রে বরাদ্দ হয়েছে ২ একর করে জায়গা। অর্থাৎ প্রধান তিন ধর্মের সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে পাশাপাশিই।
আরও শুনুন: কষ্ট করতে পারলেই পুণ্য! গুজরাটের মন্দিরে হাতির মূর্তির পায়ের ফাঁকে আটকাল যুবক
মৃতের ধর্ম না থাকলেও, তাঁর পরিজনরা নির্দিষ্ট ধর্মবিশ্বাসী। সেই বিশ্বাস অনুযায়ী নির্দিষ্ট রীতি তাঁরা পালন করতেই আগ্রহী হবেন। এই বিভিন্নতা মেনে নিয়েও যে এমন সহাবস্থানের আয়োজন হতে পারে, তা ভারতের মতো বহুত্বের উদযাপনকারী দেশেই বোধহয় সম্ভব। শুধু জীবনকালে নয়, মৃত্যুতেও যে সম্প্রীতির বার্তা মিশে থাকতে পারে, এ সৎকার-স্থান যেন সে-কথাই মনে করিয়ে দিতে চায়।