‘লগান’ সিনেমায় দুঁদে ব্রিটিশ দলের বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলতে মাঠে নেমেছিল গ্রামের চাষাভুষো লোকেরাই। কিন্তু সিনেমার গল্পকেও বুঝি হার মানায় বাস্তবের এক কাণ্ডকারখানা। এখানে না খেলোয়াড়েরা আসল, না খেলা। স্রেফ খেতখামারে কাজ করা গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকেই জনা কয়েককে ক্রিকেটার সাজিয়ে আস্ত আইপিএল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে ফেলেছে এই গ্রাম। এমনকি সেই ফাঁদে পা দিয়েছে বেটিং-এর সঙ্গে জড়িত একাধিক ভিনদেশিও। কী ঘটেছে ঠিক? শুনে নেওয়া যাক।
জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া দূরে থাক, ক্রিকেটের আঞ্চলিক টুর্নামেন্ট বা আইপিএল-এ ডাক পেতেও রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হয় খেলোয়াড়দের। কিন্তু অত পরিশ্রমের জায়গায় চটজলদি মেড-ইজির বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল এই যুবক। ইচ্ছে থাকলেই মাঠে নেমে পড়া যাবে, উপরন্তু জুটবে কড়কড়ে চারশো টাকা। হ্যাঁ, এমনই লোভনীয় প্যাকেজের অফার নিয়ে হাজির হয়েছিল সে। জুটেছিল কদরও। তবে শেষরক্ষা হল না। নিজে প্রলোভনের জাল ভাল করে বিছানোর আগেই তড়িঘড়িই পুলিশের জালে ধরা পড়ে গেল শোয়েব দাভড়া নামের ওই যুবক। মহাজনের পথ ধরে শোয়েবের সঙ্গী হয়েছে তার আরও তিনজন সহকর্মী।
আরও শুনুন: নিয়মের আজব গেরো! কোচের থেকে অন্তর্বাস ধার করে কোর্টে নামলেন টেনিস তারকা
কী ঘটেছে ঠিক? তাহলে খুলেই বলা যাক।
রাজার খেলা ক্রিকেট। আর এই খেলাকে ঘিরে যে বেটিং চক্র চলে গোটা বিশ্ব জুড়েই, তার সুবাদে রাতারাতি রাজারাজড়া হয়ে যাওয়া লোকের সংখ্যাও কম নয়। এমন চটজলদি ধনী হওয়ার স্বপ্নটাই হাতছানি দিয়েছিল গুজরাটের প্রত্যন্ত গ্রামের ওই যুবককে। আর তার জেরেই নিজের গ্রামে একটা গোটা আইপিএল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে ফেলেছিল সে। রাশিয়ার এক পাবে আট মাস কাজ করার দরুন ক্রিকেট জুয়ার গতিপ্রকৃতি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল তার। দেশে ফিরে সেই বিদেশি চালেই চলতে শুরু করেছিল সে। এক স্থানীয় ব্যক্তির কাছ থেকে তাঁর খামারটি ভাড়া নিয়েছিল শোয়েব। ওই খামারের কর্মীদের মধ্যে থেকে সে বেছে নিয়েছিল ২১ জনকে, ম্যাচ পিছু যাদের পারিশ্রমিক ছিল চারশো টাকা। এ ছাড়া আম্পায়ার এবং ভাষ্যকারের ব্যবস্থা করতেও সে ভোলেনি। বিখ্যাত ক্রিকেট ভাষ্যকার, খোদ হর্ষ ভোগলে-কে নকল করে ম্যাচের কমেন্ট্রি করেছে ওই নকল ভাষ্যকার। এদিকে আইপিএল-এর টিশার্ট, ম্যাচ লাইট, ক্যামেরা, কোনও আয়োজনেই ত্রুটি ছিল না। এমনকি এক পক্ষকাল ধরে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও নিয়মিত ম্যাচের সম্প্রচার করে গিয়েছে সে। এই টুর্নামেন্টের খবর জানিয়ে রাশিয়ার এক বেটিং চক্রকে প্রলোভন দেখিয়েছিল শোয়েব। সব দেখেশুনেও এই জালিয়াতি ধরতে পারেনি ওই অভিজ্ঞ বেটিং-বিশারদেরা। উলটে এই জাল টুর্নামেন্টে বড়সড় অর্থ বিনিয়োগ করে বসে তারা।
আরও শুনুন: রাত্রিযাপনে খরচ নেই এক পয়সা, তবু কেউ থাকতে নারাজ এই হোটেলে! কেন জানেন?
আসল আইপিএল শেষ হওয়ার তিন সপ্তাহ পরে শুরু হয়েছিল শোয়েবের আয়োজিত এই আইপিএল-এর চক্কর। এ খেলা অবশ্য তার নির্ধারিত সূচি শেষ করতে পারল না। অনেকদূর এগিয়েও শেষমেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে মূলচক্রী শোয়েব দাভড়া-সহ আরও তিনজন। আপাতত অমীমাংসিত অবস্থাতেই থেমে গিয়েছে তাদের আয়োজন করা জাল আইপিএল টুর্নামেন্টটি। তবে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় হাসির রোল পড়েছে সর্বত্র। কেউ কেউ বলছেন, এ যেন বাস্তব নয়, ঠিক যেন সিনেমার মতোই। তবে হ্যাঁ, ক্ল্যাইম্যাক্সে পৌঁছে যা ঘটল, সেই গ্রেপ্তারির ঘটনাটা কিন্তু জলজ্যান্ত বাস্তব। সেখানে কোনও ভেজাল নেই।