আবার আন্দোলন। অবরোধ। বৈঠক, ব্যর্থতা, ফের আন্দোলন। কৃষক আন্দোলনের সেই চেনা ছবি ফিরেছে দেশে। শুধু দেশে নয়, বাইরের দুনিয়াতেও একাধিক দেশে জেগে উঠছে একই ছবি। সরকারের নীতির প্রতিবাদ করে, নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য পথে নামছেন অন্নদাতারা। শুনে নেওয়া যাক।
দেশ জুড়ে দ্বিতীয় দফায় শুরু হয়েছে কৃষক আন্দোলন। এর আগেই বিতর্কিত কৃষি বিল প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষকদের উত্তাল বিক্ষোভ দেখেছিল দেশ। এবার ন্যায্য এবং ন্যূনতম দাবি আদায়ের জন্য ফের পথে নেমেছেন অন্নদাতারা। কৃষিপ্রধান এই দেশে কেন বারবার কৃষকদের দাবি আদায়ের জন্য পথে নামতে হচ্ছে, ফিরে ফিরে আসছে এই প্রশ্ন। তবে কথা হল, অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন ছাড়া আর কোনও পথ বোধহয় কৃষকদের সামনে খোলা নেই। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের আরও একাধিক দেশ সে কথা বুঝিয়ে দিচ্ছে বারে বারে। দেখা যাচ্ছে, বিশ্বজুড়েই একের পর এক দেশে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য পথে নামছেন কৃষকরা। সোচ্চার হচ্ছেন সরকারের বিভিন্ন কৃষিনীতির বিরুদ্ধে। এই মুহূর্তে ইউরোপের অন্তত ১২টি দেশ জুড়ে বড় আন্দোলনের পথে হাঁটছেন সে দেশের কৃষিজীবীরা।
আরও শুনুন:
কৃষকদের ‘সোশাল মুখ’ বন্ধ, তাতে কি আটকানো যাবে যন্ত্রণার খতিয়ান?
কোন কোন দেশে জারি রয়েছে কৃষক আন্দোলন?
কিছুদিন ধরেই ফ্রান্স এহেন বিক্ষোভের সাক্ষী। সম্প্রতি প্যারিসের ৬০তম আন্তর্জাতিক কৃষিমেলায় হাজির হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। এমনিতেই এই অনুষ্ঠানটি এক অর্থে রাজনৈতিকও, বরাবরই প্রেসিডেন্ট ও বিরোধী নেতারা এখানে এসে জনতার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। কিন্তু এবার সেখানেই কৃষকদের তুমুল বিক্ষোভের সামনে পড়তে হয়েছে প্রেসিডেন্টকে।
গ্রিসে আবার সম্প্রতি সংসদ ভবনের সামনেই হাজির হয়েছিলেন কৃষকরা। রংবেরঙের ট্রাক্টর নিয়ে এসে, হর্ন বাজিয়ে উৎপাদনমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সরব হন তাঁরা। তাঁদের হাতে পোস্টারে লেখা ছিল, আমাদের ছাড়া তোমরা খেতে পাবে না। দুর্ভিক্ষের প্রতীক হিসেবে নকল কফিন, ফুলের মালাও ছিল তাঁদের সঙ্গে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও স্থানীয় কৃষি নীতির প্রতিবাদে সম্প্রতি কৃষক বিক্ষোভ দেখেছে স্পেনও। ট্রাক্টর নিয়ে মাদ্রিদে গিয়ে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন কৃষকরা। উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধির কারণেই বিক্ষোভে নেমেছেন তাঁরা।
আরও শুনুন:
৮৫ শতাংশ মহিলারই ‘কৃষক’ তকমা জোটে না, তবু আন্দোলনে শামিল তাঁরাও
একইভাবে একাধিক ইউরোপীয় দেশেই প্রতিবাদ চলছে। রাজধানী কিংবা বড় শহরের বুকে ট্রাক্টর জমায়েত করছেন আন্দোলনকারীরা, যেমনটা দিল্লি-হরিয়ানার সীমান্তে করছেন এ দেশের আন্দোলনকারী কৃষকরা। আটকে দিচ্ছেন রাজপথ। পুড়িয়ে দিচ্ছেন শস্য আর জৈব সার। কিন্তু একটি জায়গায় ভারতের কৃষক আন্দোলন এই সব বিক্ষোভের থেকে আলাদা। আন্দোলনের গোড়া থেকেই কৃষকদের রুখে দিতে তৎপর কেন্দ্র সরকার। দিল্লি সীমান্তে কড়া পাহারা বসানো, অস্থায়ী জেল তৈরি করা থেকে টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করা তো ছিলই। পাশাপাশি নিজেদের দাবিদাওয়া বা আন্দোলনের গতিপ্রকৃতির খবর যাতে কৃষকরা বেশি করে ছড়িয়ে দিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে সোশাল মিডিয়া ব্যবহারেও কাঁটাতার তুলেছে সরকার। ২১ বছরের কৃষক শুভকরণ সিং-এর মৃত্যুর পর রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘কৃষক এমএসপি চেয়েছিল, তাকে গুলি করা হল, এই কি গণতন্ত্র?’ একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, আন্দোলনকারী কৃষকদের উপর এহেন দমনমূলক আচরণ দেখাচ্ছে না অন্য কোনও দেশই। কোনও গণতন্ত্রে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হতেই পারে, কিন্তু আন্দোলনকারীদের মানবাধিকারের দিকটিও যে সরকারকেই খেয়াল রাখতে হবে, বিশেষ করে কৃষি আন্দোলনের সামনে সে কথা মনে রাখা জরুরি।