প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার লড়াই। আরও বেশি রোজগারের তাগিদ সকলেরই। এহেন পরিস্থিতিতে নিজের যাবতীয় সম্বল দান করার ঘটনা বিরল। কিন্তু সেই কাজ করেই ব্যতিক্রমী হয়েছেন এক গরীব কৃষক। গ্রামের স্কুল তৈরির জন্য এক কথায় নিজের ১১ কাঠা জমি দান করেছেন তিনি। কোথায় ঘটেছে এই কাণ্ড? আসুন শুনে নিই।
স্বাধীনতার পর কেটেছে অনেকগুলো বছর। অথচ দেশের এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যা এখনও তেমনভাবে উন্নত নয়। বেশিরভাগ গ্রামেই হাসপাতাল বা স্কুলের সংখ্যা হাতে গোনা। কোথাও আবার মাত্র একটা। আর সেই একটা স্কুলও যদি কোনওভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে গ্রামের অবস্থা শোচনীয় হওয়াই স্বাভাবিক।
আরও শুনুন: কেদারনাথ মন্দিরের গর্ভগৃহে টাকার বৃষ্টি, মহিলার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় নেটদুনিয়ায়
তেমনটাই হয়েছিল বিহারের কাহারপুর গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামের জমিতে ভূমিক্ষয়ের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। যার জেরে গ্রামের একাধিক বাড়ি ধসে যায়। বিপর্যয়ের হাত থেকে রেহাই পায়নি গ্রামের একমাত্র স্কুলটিও। বছর তিনেক আগে তা সম্পূর্ণভাবে ধসে যায়। ঘটনায় ভারি সমস্যায় পড়ে স্কুলের পড়ুয়ারা। কেউ কেউ পাশের গ্রামে স্কুলে গিয়ে ভরতি হয়। কিন্তু সবার তো সেই সামর্থ নেই। তাই মাঝপথে পড়াশোনা থামাতে বাধ্য হয় অনেকেই। সমস্যা মেটাতে অবিলম্বে নতুন স্কুল গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই কাজে সাহায্যের আশ্বাস দেন গ্রামবাসীও। কিন্তু গ্রামের বেশিরভাগ জমিই তো ধসে গিয়েছে, তাই নতুন করে স্কুল তৈরির জায়গা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাঁরা। ঘটনার কথা জানতে পারেন গ্রামের এক বৃদ্ধা। নিজে শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হলেও, তিনি ভালমতোই বুঝতেন গ্রামের সর্বাঙ্গিন উন্নতি সাধনে স্কুল কতটা প্রয়োজনীয়। গ্রামের খুদে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে, শুনে বেজায় কষ্ট পান তিনি। তখনই ঠিক করেন কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন।
আরও শুনুন: হনুমান কি সত্যিই ‘বাপ তুলে’ কথা বলতেন! কী জানাচ্ছে বাল্মীকির রামায়ণ?
যেমন ভাবা তেমন কাজ। ছেলেকে ডেকে ঘটনার কথা সবিস্তারে জানান তিনি। এবং স্কুলের জন্য জমি দান করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। মায়ের কথায় একবাক্যে রাজি হয়ে যান ছেলেও। তাঁর জীবিকা বলতে মূলত চাষবাস। নিজের বেশ কিছু জমি রয়েছে। যার সিংহভাগই তিনি স্কুলের জন্য দান করবেন বলে ঠিক করেন। পরদিনই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে প্রায় ১১ কাঠা জমি দান করার কথা বলেন তিনি। প্রস্তাব শুনে বেজায় খুশি হন গ্রামবাসীও। কিছুদিনের মধ্যেই লিখিতভাবে স্কুলের জন্য নিজের ১১ কাঠা জমি দান করেন ওই কৃষক। তাঁর একমাত্র অনুরোধ ছিল, নতুন স্কুলের নাম তাঁর মায়ের নামে রাখা হোক। স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই অনুরোধ রাখবেন বলেই আশ্বস্ত করেন। বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে এই ঘটনাকে বিরল বলেই মনে করছেন অনেকে। যেখানে কেউ কেউ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও সামান্য দান করতে পিছিয়ে আসেন, সেখানে এই ব্যক্তি কৃষক হয়েও নিজের সর্বস্ব দান করেছেন, তাই গ্রামবাসী থেকে আরম্ভ করে ওয়াকিবহাল মহলের সকলেই তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন।