আইনি পথে হাঁটার দরকার নেই, অপরাধী দেখলেই ‘ঠোক দো’ বুলি যোগীরাজ্যের পুলিশের মুখে। এমনকি এনকাউন্টারে কোনও অভিযুক্তের মৃত্যু হলে তাকে পুলিশের বড় সাফল্য বলেই দেখা হয়। সম্প্রতি এমনই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছে মামলা। শুনে নেওয়া যাক।
কেবল পুলিশি এনকাউন্টারেই নিহত ১৮৩ জন অভিযুক্ত। একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে উত্তরপ্রদেশের এই পরিসংখ্যানের ব্যাপারেই রিপোর্ট তলব করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আর সেখানেই আরও বিস্ফোরক অভিযোগের মুখে যোগীরাজ্যের প্রশাসন। মামলাকারীর দাবি, আদিত্যনাথের রাজ্যে এনকাউন্টারকে বড় সাফল্য হিসেবেই উদযাপন করা হয়। এমনকি এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট আধিকারিকদের ভাগ্যে জোটে হঠাৎ পাওয়া প্রোমোশন কিংবা সাহসিকতার পুরস্কার। আর এইভাবে বেআইনি এনকাউন্টারের প্রবণতাকে আরও উসকে দেয় খোদ প্রশাসনই, অভিযোগ মামলাকারীর।
আরও শুনুন: মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে সিঁদুর ছুড়ে আরতি, কর্ণাটকে গ্রেপ্তার ৫ যুবক
আসলে কোনও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ শাস্তির চল সবসময়েই কম। বরং অপরাধীদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি না, তা দেখার জন্য এ দেশে জেলগুলিকে সংশোধনাগারে বদলানোর কথাও ভাবা হয়েছে। কিন্তু যোগীরাজ্যে যেন ব্যাপারটা উলটো। পর্দার ‘সিঙ্ঘম’-এর মতোই, অপরাধীদের সঙ্গে সঙ্গে শাস্তিবিধান করার পক্ষপাতী যোগী আদিত্যনাথ। তাই আদালতে দীর্ঘ বিচার এবং তারপর অপরাধীকে সাজা শোনানো, এই আইনি পথে হাঁটার বদলে বারে বারেই অপরাধীদের সঙ্গে এনকাউন্টারে জড়িয়েছে যোগীরাজ্যের পুলিশ। এমনকি খোদ আদিত্যনাথের গলাতেও এই দাবি শোনা গিয়েছে, যে, তাবড় তাবড় গ্যাংস্টারেরা এনকাউন্টার নীতির ভয়ে কাঁপছে। যোগী আদিত্যনাথের কথাকেই যেন কার্যত সমর্থন করে সে রাজ্যের এনকাউন্টারের পরিসংখ্যানও। যা জানাচ্ছে, যোগী আদিত্যনাথ সরকারের আমলে গত ছ’বছরে, ১০,৭১৩ ‘এনকাউন্টার’ হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। যাতে নিহতের সংখ্যা ১৮৩। আহত ৪,৯১১ জন অভিযুক্ত। দেশে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা, এমনকী জম্মু-কাশ্মীরের মতো অশান্ত অঞ্চলেও পুলিশের গুলিতে এত মানুষের মৃত্যুর নজির সাম্প্রতিককালে নেই। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী বিশাল তিওয়ারি। যোগীরাজ্যে যথেচ্ছভাবে বেআইনি এনকাউন্টার করছে পুলিশ, এই অভিযোগেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। এদিকে ঝাঁসিতে এনকাউন্টারে গ্যাংস্টার তথা প্রাক্তন বিধায়ক আতিক আহমদের ছেলে আসাদ এবং তার সঙ্গী গুলামের মৃত্যু, তারপরেই প্রকাশ্য কোর্ট চত্বরে আতিক ও তাঁর ভাই আশরাফের খুন, সব মিলিয়ে ফের চর্চায় উঠে এসেছিল এনকাউন্টার নীতি। এই ইস্যুতে মামলা করেছেন আতিক আহমেদের বোনও। এই পরিস্থিতিতে যোগীরাজ্যের এনকাউন্টারের ঘটনা নিয়েই বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, সেখানে উল্লেখ রয়েছে মাত্র ৭টি ঘটনার, তাও তাতে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই- শীর্ষ আদালতে এমনটাই দাবি করেছেন মামলাকারীরা।
আরও শুনুন: তেরঙ্গার মধ্যে আরবি হরফে লেখা পতাকা নিয়ে মিছিল, হুলুস্থুল যোগীরাজ্যে
দেশের সংবিধান বলে, যে কোনও অপরাধীরও বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু অপরাধীদের বিরুদ্ধে যোগীরাজ্যের এই জিরো টলারেন্স নীতি বারেবারেই রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। এই এনকাউন্টার প্রবণতাকে যে খুব একটা ভাল চোখে দেখছে না দেশের আইনব্যবস্থা, আগেও তারই ইঙ্গিত দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। এবার মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট কোন পথে হাঁটবে, সেটাই দেখার।