কখনও হিমাচলপ্রদেশ, কখনও উত্তরাখণ্ড, বন্যা-ধসের অভিশাপ নেমেছে বারে বারে। হুঁশিয়ারি মিলেছে পরিবেশের বিপন্নতা নিয়েও। কিন্তু এত কিছুর পরেও, লোকসভার আবহে মুখ্য হল রাজনীতিই আর পরিবেশ রইল ব্রাত্য। শুনে নেওয়া যাক।
আমরা যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি, তাকে সভ্যতার সংকট বলা যায় কি না, তা নিয়ে তর্কবিতর্ক চলে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে মানবসভ্যতাই যে এক বড় সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে পড়েছে, তা নিয়ে দ্বিমতের জায়গা নেই। সে সংকট পরিবেশের। সে সংকট প্রকৃতির। তার বিপন্নতায় এই মানবসভ্যতা কতদিন টিকে থাকতে পারবে আদৌ, সে কথাই এখন প্রশ্নের মুখে। বারে বারে ভয়ংকর সব বিপর্যয়ে এসওএস পাঠিয়ে চলেছে প্রকৃতি। বারে বারে বিজ্ঞানীরা, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে। আর সেজন্য পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগও নিতে হবে দ্রুত। তারপরেও, রাজনীতির বাজারে ব্রাত্যই পরিবেশ। সাধারণত কোনও দলের নির্বাচনী ইস্তেহারেই পরিবেশ রক্ষার কথা সেভাবে থাকে না। চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনেও সামনে এল সেই একই ছবি। সাম্প্রতিক অতীতেই প্রকৃতির ভরাবহ ক্রোধের মুখোমুখি হয়েছিল হিমাচলপ্রদেশ আর উত্তরাখণ্ড। এখনও নানাভাবেই পরিবেশের বদলে যাওয়ার ফল ভুগছে রাজ্যগুলি। তারপরেও, ভোটের বাজারে অতীত সেই স্মৃতি।
-: আরও শুনুন :-
যেখানে সোনম ওয়াংচুক নেই, সেখানে পরিবেশ বেশ আছে তো?
উত্তরকাশীর সিলকিয়ারাতে যেভাবে ধস নেমে সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছিলেন ৪১ জন শ্রমিক, সে কথা কিন্তু এত দ্রুত ভুলে যাওয়ার কথা ছিল না। তাঁরা আদৌ আর দিনের আলো দেখবেন কি না, সে উদ্বেগে রাত জেগেছিল সারা দেশ। তার আগে যোশিমঠের ভাঙনের পরেও সে এলাকাকে বসবাসের অযোগ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ভারত-চিন সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত যোশিমঠ-মালারি সড়ক জুড়ে দেখা গিয়েছিল বড় বড় ফাটল। আবার একটানা বৃষ্টি ও হড়পা বানের জেরে তছনছ হয়ে গিয়েছিল হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড। যে ঘটনাকে জাতীয় বিপর্যয় বলেই ঘোষণা করতে বাধ্য হয় সরকার। মাত্র বছরখানেকের মধ্যেই এমন বড় বড় বিপদের মুখে পড়তে হয়েছে এই পার্বত্য রাজ্যগুলিকে। বেহিসেবি সবুজ ধ্বংস, লাগামছাড়া উন্নয়নের জোয়ার আর পুঁজিবাদী আগ্রাসনের পর এই পরিস্থিতিকে প্রকৃতির প্রতিশোধ বলেই দাবি করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু তারপরেও চোখ খোলেনি। তাই দেশ যখন নতুন সরকার গড়ার মুখে দাঁড়িয়ে, সেই সময়েও কোনও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মুখেই শোনা যাচ্ছে না পরিবেশ সংক্রান্ত কোনও ভাবনার বিন্দুমাত্র উল্লেখ। এমনিতে নির্বাচনী ইস্তেহারে জনমুখী প্রকল্পের কথাই ঘোষণা করে দলগুলি। বলে আমজনতার সুবিধার কথা। কিন্তু যেখানে গোটা মানবসভ্যতাই এহেন অসুবিধার মুখে এসে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে সেই বিষয়গুলি আর কবে আলোচনায় আসবে- প্রশ্ন পরিবেশবিদদের।
-: আরও শুনুন :-
লোকসভা নির্বাচনে ফিরে এলেন কার্ল মার্কস, ফেরালেন সেই মোদিই
লোকসভার ঠিক মুখেই, পরিবেশ রক্ষার দাবিতেই অনশনে বসেছিলেন লাদাখের সোনম ওয়াংচুক। যে এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয় গোটা দেশ, সেই লাদাখের পরিবেশ বদল নিয়ে তারপরেও কতটুকুই বা কথা হয়েছে! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘পরিবেশ সুরক্ষা’ বিষয়ে যেসব কাজকে ক্ষতিকারক ও বেআইনি করে রাখা হয়েছিল, গত কয়েক বছরে তার প্রত্যেকটিকে আইনি করে নেওয়া হয়েছে। এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট, মানে একটা বড়সড় উন্নয়নের কাজ করতে গেলেই পরিবেশের উপর তার ফলাফল বিচার করা-র যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা ইতিমধ্যেই নাকচ করেছে কেন্দ্র। পুঁজি আর শিল্পের অনুপ্রবেশে হিমালয়সংলগ্ন এলাকায় নানাভাবেই প্রকৃতি বিপন্ন। অথচ এই বিপন্নতা নিয়ে ভোটের মুখেও যে একদিকে শাসনব্যবস্থার উদ্ধত নিস্পৃহতা আর অন্যদিকে বিরোধীদের ঔদাসীন্য বহাল রইল, তা গোটা দেশকে ঠেলে দিল আরও সংকটের মুখেই।