ওয়ার্ক ফ্রম হোমের যুগে ভোট ফ্রম হোমের সুযোগ এনেছে নির্বাচন কমিশন। যেখানে ভোট দেওয়া যাবে ঘরে বসেই। তারপরেও কেন ধন্দ কাটছে না প্রবীণদের? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দুয়ারেই হাজির সরকার, থুড়ি, সরকার নির্বাচনের প্রক্রিয়া। হ্যাঁ, আসন্ন লোকসভা ভোটে নয়া উদ্যোগ নিয়েছে দেশের নির্বাচন কমিশন। যেখানে ঘরে বসেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন ৮৫ বছরের বেশি বয়সি মানুষেরা এবং বিশেষভাবে সক্ষম ভোটাররা। কমিশনের তথ্য পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, চব্বিশের নির্বাচনে ৮৫ ঊর্ধ্ব ভোটারের সংখ্যা ৮২ লাখ। এর মধ্যে ২ লাখ ১৮ হাজার জন শতায়ু ভোটারও রয়েছেন। এমনিতেই বয়স্ক মানুষদের পক্ষে বাড়ি থেকে বুথে গিয়ে ভোট দেওয়া সবসময় সহজ হয় না। যেসব মানুষেরা বিশেষভাবে সক্ষম, তাঁদের ক্ষেত্রেও এইভাবে যাতায়াত করা রীতিমতো সমস্যার। সে কারণে অনেকসময়ই এই নাগরিকেরা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতেই পারেন না। অথচ বারে বারেই বলা হয়, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রতিটি ভোটই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে কোনও নির্বাচনে এই ভোটগুলি না পড়া মানে, এক বড় অংশের মানুষের মতামত অনুচ্চারিত থেকে যাওয়া। সে কথা মাথায় রেখেই এবার এই নয়া পদক্ষেপ কমিশনের। ‘ভোট ফ্রম হোমে’র আওতায় এই প্রথম বাড়ি থেকেই ভোটদান করার সুযোগ মিলছে প্রবীণদের। কিন্তু তার পরেও, এই সুবিধা আদৌ নেবেন কি না, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন কোনও কোনও প্রবীণ মানুষ। ঠিক কী কারণে এই দ্বন্দ্ব তাঁদের?
আরও শুনুন:
প্রধানমন্ত্রীরা কী করে সিদ্ধান্ত নেন? জেলে বসেই বুঝতে চাইছেন কেজরি, সঙ্গী ভাগবত-রামায়ণ
সে কথার উত্তর দিয়েছেন দিল্লির বাসিন্দা গুল শিবদাসানি। এই নয়া উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েও তাঁর সাফ কথা, বুথে গিয়েই নিজের ভোট নিজে দিতে চান তিনি। কিন্তু এই বয়সে সেই যাতায়াত করা তো তাঁর পক্ষে বেশ পরিশ্রমের? তা নিয়ে আদৌ ভাবিত নন এই বৃদ্ধ। বরং সেই যাতায়াতই তিনি করতে চান, কারণ এই ছুতোয় খানিক বাড়ি থেকে বেরোনোর সুযোগ মিলবে যে তাঁর। এ কথা তো অস্বীকার করা যায় না, যে, বয়স বাড়লে অনেকসময়ই যেন একরকম বাদের খাতায় পড়ে যেতে হয় মানুষকে। শারীরিক সক্ষমতা কমে আসে, ফলে একা বেরোনো আর সহজ থাকে না। এদিকে পরিবারের তরফে চিন্তা বাড়ে, কিন্তু কখনও কাজের চাপে, কখনও বা অবহেলার দরুনও তাঁদের সঙ্গ দেওয়া হয়ে ওঠে না। সব মিলিয়ে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে পড়েন বৃদ্ধ মানুষেরা। কোনও উৎসব বা অনুষ্ঠান উপলক্ষেই বাইরের দুনিয়াটার সঙ্গে তাঁদের ফের দেখা হয়। ভোটের দিনটি তাঁদের কাছে তেমনই এক সুযোগ বয়ে আনে যেন। যেদিন বাইরে যাওয়া যায়, অন্যান্য মানুষের সঙ্গে কথা বলা যায়। বুথে গিয়ে ভোট দেওয়ার প্রসঙ্গে এই যুক্তিই খাড়া করছেন গুল শিবদাসানি।
আরও শুনুন:
ভোট বড় বালাই! চলছে কু-কথায় শোকজের মরশুম, কিন্তু অন্য সময়?
শুধু তাই নয়, নির্বাচনের বিষয়টিকেও অবশ্য বাড়তি গুরুত্ব দেন এই প্রবীণেরা। তাঁদের পুরনো দিন দেখার চোখে সংসদীয় নির্বাচন এখনও গুরুত্ব হারায়নি। তাই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা তাঁদের কাছে এখনও জরুরি বলেই মনে হয়। আর সেই সিদ্ধান্তকে যাতে অন্য কেউ প্রভাবিত করতে না পারে, সে কথা ভেবেও বুথে যাওয়ার পক্ষেই সওয়াল করছেন এই প্রবীণেরা।