ধর্মই বয়ে আনে জীবনের অর্থ। আর সেই ধর্মের জন্য অর্থ খরচ করতে পিছপা নন এক চিকিৎসক। আক্ষরিক অর্থেই কোটি কোটি টাকা তিনি খরচ করছেন, যাতে হিন্দু ধর্মের গূঢ় কথা, দর্শন ছড়িয়ে পড়ে। তবে, এই কাজ যে তিনি ভারতে করছেন তা নয়, করছেন বিদেশের মাটিতে? আসুন শুনে নেওয়া যাক সেই বিপুল কর্মকাণ্ডের কথা।
তিনি চিকিৎসক। তাঁর স্ত্রী ফিটনেস নিয়ে পরামর্শ দেন। দুজনেই রীতিমতো কষ্ট করে উপার্জন করেন। কোনও আলাদা ব্যবসা নেই যে, বাড়তি টাকা রোজগার করবেন। তবে, এই উপার্জনের একটা মোটা অংশই তাঁরা ব্যয় করেন, হিন্দু ধর্মের প্রচারের জন্য। আমেরিকার মাটিতে যাতে প্রাচীন এই ধর্ম-দর্শনের কথা সম্যক ভাবে প্রচারিত হয়, সেটাই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। আমেরিকান-ভারতীয় চিকিৎসক মিহির মেঘানি ও তাঁর স্ত্রীর কাছে এই কাজই হয়ে উঠেছে ব্রত।
আরও শুনুন: নারী কি সম্পত্তি না যৌনসুখের সামগ্রী! ধর্ষণ রুখতে ভাবনায় বদল হোক, মত আদালতের
গত দেড় দশক ধরেই এই কাজ করে আসছেন ডাঃ মেঘানি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখন তিনি পাশ করে বেরোচ্ছেন, তখনই অনুভব করেছিলেন, আমেরিকার মাটিতে হিন্দু-দর্শন প্রচারের সংগঠন থাকা উচিত। সেই তখনই, সমমনস্ক বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন ছোট্ট একটি সংঘ। তারপর বহুদিন গড়িয়েছে। এখন অনেক সংঘই এগিয়ে এসেছে এরকম কাজে। বহু প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা দান করেছেন তিনি। তবে, অনেকে করছে বলেই তিনি কিন্তু এই কাজ থেকে সরে আসেননি। তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর মতে, প্রচারের এই কাজই হচ্ছে তাঁদের ধর্মপালন।
আরও শুনুন: মসজিদে যাওয়ার রাস্তা নেই, স্বেচ্ছায় চাষের জমি দান করলেন আসামের হিন্দু ব্যক্তি
ডাঃ মেঘানি মনে করেন, হিন্দু ধর্ম শুধু ‘রিলিজিয়ন’ অর্থে ধর্ম মাত্র নয়। তা জীবনচর্যার অংশ। জীবনকে আমরা কীভাবে দেখব, সেই দর্শনের কথাই বলে হিন্দু ধর্ম। তবে, ভিনদেশের বাসিন্দারা এই ভাবে হিন্দু ধর্মকে দেখতে অভ্যস্ত নন। যাঁরা মূলত আব্রাহামিক প্রেক্ষাপট থেকে এসেছেন, তাঁদের পক্ষে হিন্দু ধর্মের এই দর্শনগত তাৎপর্য বোঝা সহজ নয়। ঠিক সেই জায়গাটি চিহ্নিত করেই নিরলস কাজ করে যেতে চান এই চিকিৎসক। তাঁর মতে, হিন্দু ধর্ম এবং ভারতীয় সত্তা দুটোরই একই ভাবে যত্ন নেওয়া উচিত। কেননা যৌথভাবে তা এক রাজনৈতিক সত্তাও নির্মাণ করছে, যা বিদেশের মাটিতে ভারতীয়দের থাকা জরুরি। আর সেই সত্তা বুঝতে গেলে প্রচার দরকার। খরচ দরকার। সেই জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই তিনি উপার্জনের অর্থ দান করবেন বলে মনস্থ করেছিলেন। আজ প্রায় দেড় দশক ধরে সেই কাজই করে আসছেন। এটিকেই তাঁর কর্তব্য বলে মনে করেন তিনি।
জীবনের শিক্ষা দিয়েই গোটা পৃথিবীকে এই চিকিৎসক যেন জানাতে চান, কর্তব্য করে যাওয়াই প্রকৃত ধর্ম।