রাজনৈতিক ভাবে তাঁরা ঘোরতর বিরোধী। একে অন্যকে ছেড়ে কথা বলেন না! বলতে গেলে, কার্যত তুলোধোনা করেন। তবে, নেহাতই কি শত্রুতা! নাকি মোদি আর গান্ধীদের মধ্যে কথাবার্তাও হয়? আসুন, ভোটের লড়াইয়ের মধ্যে সে কথা শুনেই নেওয়া যাক।
লড়াইটা কংগ্রেস বনাম বিজেপির। তবে, রাজনীতির ময়দানে কবে আর লড়াই কেবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সীমাবদ্ধ থাকে! বিশেষত এ দেশে দলের থেকে নেতার গুরুত্বের পাল্লা ভারি হয়ে যায়। সেই কারণেই বর্তমান সময়ে বিজেপি আর নরেন্দ্র মোদি প্রায় সমার্থক হয়ে গিয়েছে। একই ভাবে কংগ্রেস আর গান্ধী পরিবার যেন পৃথক কোনও অর্থ বহন করে না। ফলত, লড়াইটা হয়ে গিয়েছে গান্ধী বনাম মোদির।
আরও শুনুন: ভোট দিতে গেলেন না! বদলে দিতে হতে পারে জরিমানাও, জানেন কি?
রাজনীতির ময়দানের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, দু’জনই দু’জনকে কড়া ট্যাকল করছেন। যুদ্ধে বিন্দুমাত্র মাটি ছাড়তে কেউ রাজি নন। অতএব প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনামে উঠে আসে মোদি আর গান্ধী বিরোধিতার সাতকাহন। বিশেষত এই ভোটের সময় হলে তো আর কথাই নেই! তবে, রাজনীতিতে বিরোধিতা যেমন আছে, তেমন সৌজন্যও তো থাকে! গান্ধী পরিবার আর মোদির মধ্যে সেই সৌজন্যও কি শুধু রাজনৈতিক পরিসরে! নাকি ব্যক্তিগত স্তরেও কথাবার্তা হয়? এরকম কৌতূহল থাকা অস্বাভাবিক নয়। সদ্য সে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিষয়টি খোলসা করেই জানিয়েছেন তিনি। নাহ্, হলায়-গলায় বন্ধুত্ব বা আন্তরিক সম্পর্ক বলতে যা বোঝায়, তা তাঁদের মধ্যে নেই। অর্থাৎ বিরোধিতার মাত্রা নেহাতই উপর-উপর নয়। আদর্শগত দুই বিরোধী শিবিরের মধ্যে যে দূরত্ব থাকার কথা, তা তাঁদের মধ্যেও আছে। তাই বলে মুখ দেখাদেখি বন্ধ, এমন ব্যাপারও নেই। মোদির বক্তব্য, রয়্যাল ফ্যামিলির সঙ্গে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। তবে বিপদ-আপদ হলে ফোন করতে দ্বিধা করেন না তিনি। রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই হোক না কেন, তিনি তো দেশের প্রধানমন্ত্রী; ফলে, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী যদি সমস্যায় পড়েন, তাহলে তাঁর খোঁজখবর নেওয়া কর্তব্য বলেই মনে করেন তিনি। একবার মহারাষ্ট্রে ভোটের সময় গিয়ে মুশকিলে পড়েছিলেন রাহুল গান্ধী। বিমানে সমস্যা হওয়ার দরুন বিপাকে পড়েছিলেন কংগ্রেস নেতা। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেই সময় ব্যক্তিগত ভাবেই রাহুলকে ফোন করেছিলেন তিনি।
আরও শুনুন: নেতাদের মোচ্ছবের ঠেলায় লাফিয়ে বাড়ছে মাংসের দাম, মাথায় হাত ভোটারদের
সোনিয়া গান্ধীও যখন বিপদে পড়েন, একই ভাবে তৎপর হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কাশীতে তখন মোদির বিরুদ্ধেই প্রচার করছিলেন সোনিয়া। আচমকা তাঁর অসুস্থতার খবর পান মোদি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে দিল্লিতে বিশেষ বিমানে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। আরও একবার সোনিয়ার হেলিকপ্টার বিপর্যয়ের কবলে পড়েছিল। সে খবর পান মোদি। আহমেদ প্যাটেলও সেই সময় সঙ্গে ছিলেন। মোদি প্যাটেলকে ফোন করেন। এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেন। সোনিয়া যাতে নিরাপদে ফিরে আসতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করেন।
তাহলে ব্যাপারটা কোথায় গড়াল? রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকে এবং থাকবেই। কিন্তু তা ব্যক্তিগত সম্পর্কে, বিশেষত বিপদের সময় প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে না। বেশ ইঙ্গিতিপূর্ণ একটা কথায় সেই ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ-ও আসলে এক ধরনের আত্মীয়তা। তাঁর মতে, সকলেই তো দেশের জন্য কাজ করছেন। ফলে, আত্মীয়তা বা সম্পর্কের সঙ্গে রাজনীতি মিলিয়ে ফেলার পক্ষপাতী তিনি নন। সন্দেহ নেই, প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন, তা রাজনৈতিক পরিসরে বেশ সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। নেতারা এটুকু আত্মীয়তা বজায় রেখেই চলেন। কিন্তু তাঁদের অনুগামীরা যে রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ব্যক্তিস্তরে এনে ফেলেন, জল-অচল বিরোধে মেতে ওঠেন, তার কি তাহলে আর কোনও মূল্য থাকে? ভাবনার সেই অবকাশ দিয়ে গেলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।