চরণামৃত ভেবে এসির জল খেলেন ভক্তরা। বৃন্দাবন মন্দিরের এই কাণ্ড ঘিরে বেজায় শোরগোল পড়েছে। যদিও তাতে ভক্তদের কিছু যায় আসছে না। ভক্তিভরে যা খেয়েছেন সেটিই চরণামৃত ভেবে তাঁরা খুশি। ঠিক কী ঘটেছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মন্দিরে পুজো চলছে। বাইরে বেজায় ভিড়। সকলেই প্রসাদের আশায় দাঁড়িয়ে। এক ফোঁটা চরণামৃত পেলে জীবন বর্তে যায়। এদিকে ভিতরে ঢোকার জায়গা নেই এতটুকু। হঠাৎ চোখ গেল মন্দিরের দেওয়ালে। বিশেষ জায়গা থেকে গড়িয়ে পড়ছে জল। সকলে ছুটলেন সেদিকে। মাথায় ঠেকিয়ে সেই জল খেলেন সকলেই। যত সমস্যা এরপরেই।
পুজোর পর চরণামৃত খাওয়া স্বাভাবিক। অনেকে মনে করেন এমনটা করলে, তবেই পুজোর ফল মেলে। কিন্তু সব জায়গায় চরণামৃত পাওয়া এত সহজ নয়। বিশেশ করে এমন মন্দির, যেখানে প্রতিদিন রীতিমতো ভিড় হয়। প্রসাদ বা চরণামৃতের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন ভক্তরা। বৃন্দাবনের বাঁকে বিহারী মন্দির এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতেই পারে। তবে সেখানকার ভক্তরা সদ্য এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়েছেন। প্রতিদিনের মতো এদনিও মন্দিরে বেশ ভিড় হয়েছিল। চরণামৃত পাওয়ার আশায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ভক্তরা। হঠাৎ মন্দিরের বাইরের দেওয়ালে জল গড়াচ্ছে দেখে সেদিকে ছোটেন সকলে। আঁজলা ভরে পা করেন সেই জল। ভক্তিতে মাথায় ছেটান কেউ কেউ। চরণামৃত ভেবেই ওই জল পান করেছেন তাঁরা। যা আসলে ছিল এসির জল। মন্দিরের ভিতরের এক এসি থেকে বাইরে আসছিল ওই জল। প্রাথমিকভাবে মনে হতেই পারে, পুরো বিষয়টা অজ্ঞানতার ফসল। না বুঝে ভক্তরা ওই জল পান করেছিলেন। কিন্তু না। ভক্তদের নিষেধ করা হয়েছিল। এই জলের উৎস কী সেটাও বলা হয়েছিল। তাতে কেউ তেমন আমল দেননি। বরং ওই জলই পান করে গিয়েছেন। ভক্তিভরে এমনটা করছেন বলেই দাবি ছিল অনেকের। তাঁরা বিশ্বাসই করতে চাননি ওই জল আসলে চরণামৃত নয়।
স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তিবাদিরা। এই যুগে দাঁড়িয়েও এমন অন্ধবিশ্বাস মানতে সমস্যা হচ্ছে অনেকের। স্রেফ ভক্তির দোহাই দিয়ে এমন কাজ করা উচিত হয়নি বলেই দাবি নেটদুনিয়ার একাংশের। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, শরীর খারাপ হলে কী হবে? মন্দিরের তরফে অবশ্য আগেভাগেই বলা হয়েছিল, ওই জল পানযোগ্য হয়। এর মধ্যে কী ধরনের জীবাণু থাকতে পারে সে কথাও অজানা নয়। তাও ভক্তির টানে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন ভক্তরা। শরীর খারাপ হলে হোক, তাই বলে ভক্তিতে খামতি রাখতে নারাজ তাঁরা। অনেকে আবার এই কাজ করেছেন অন্যকে দেখে। যেভাবে সবাই ভিড় করে ওই নোংরা জল খাচ্ছিলেন তাতে বোঝার উপায় ছিল না, সেটি চরণামৃত নয়। তাই কোনওদিকে না তাকিয়ে সেই জল পান করতে ছোটেন সকলে। ভারতে এমন কুসংস্কার নতুন কিছু নয়। এখনও গ্রামাঞ্চলে এমন কিছু নিয়ম পালনের বহর দেখা যায়, যা শিক্ষিত সমাজকে অবাক করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ধর্ম। তাই প্রতিবাদের উপায় নেই। করলেও লাভ কতটা হবে, সেই নিয়ে সন্দেহ থাকবে। তাই একইভাবে প্রশ্রয় পাচ্ছে এই ধরনের অন্ধবিশ্বাস, এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের।