প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য কাজের টেবিল বানাতে অস্বীকার করলেন এক শিল্পী। স্পষ্ট করে দিলেন, ব্যবসা নয়, নিজের ব্যক্তিগত আদর্শকে সবার আগে রাখতে চান তিনি। কেন প্রধানমন্ত্রীর জন্য কাজ করতে নারাজ হলেন ওই ব্যক্তি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
নির্দেশ এসেছিল খোদ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত সচিব বলে পরিচয় দিয়ে ই-মেল পাঠিয়েছিলেন বিবেক কুমার নামে এক ব্যক্তি। তাতে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি টেবিলের নকশা বানিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু এককথায় সেই কাজের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন ডিজাইনার কুনাল মার্চেন্ট। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় তাঁর জবাবি ই-মেলের ছবি ভাগ করে নিয়েছেন এই শিল্পী। যা দেখে এহেন উত্তরের জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।
আরও শুনুন: বিকশিত না হলেও নাবালিকার ‘স্তন’ স্পর্শ করা যৌন হেনস্তাই, নজিরবিহীন রায় হাই কোর্টের
পেশায় তিনি ডিজাইনার। আসবাবপত্রের নকশা বানানোই তাঁর কাজ। তবুও কেন প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই কাজ করতে অস্বীকার করলেন কুনাল মার্চেন্ট? ই-মেলে স্পষ্টভাবে তার কারণ জানিয়েছেন তিনি। লিখেছেন, ভারতীয় জনতা পার্টি তথা বিজেপির রাজনীতি এবং কর্মপন্থার সঙ্গে তাঁর ভাবনার মূলগত ভাবেই বিরোধ রয়েছে। আর সেই কারণেই এই দলের শাসনকালে তাদের সঙ্গে কোনোরকম সংস্রব তিনি রাখতে চান না, এমনকি পেশাদারভাবেও কোনও যোগাযোগে যেতে চান না। পাছে ইতিহাস তাঁকে এই দলের ফ্যাসিবাদী চিন্তাভাবনার সঙ্গে এক করে দ্যাখে, সেই ভয়েই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কুনাল মার্চেন্ট। এই দলের চিন্তাধারাকে কেবল ফ্যাসিবাদি নয়, পিছিয়ে পড়া এবং একপেশে বলেও দাবি করেছেন তিনি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন গুন্ডামিরও। তাঁর মতে, ধর্মনিরপেক্ষ সহিষ্ণু এবং বহুজনের বহুমতের দেশ ভারতকে ঘৃণা, বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা এবং সাম্প্রদায়িক হানাহানির বিষে ভরিয়ে দিচ্ছে এই দলটি।
আরও শুনুন: ‘শুধু মসজিদে আপত্তি! লাউডস্পিকারে মূল্যবৃদ্ধির কথাও বলুন’, রাজ ঠাকরেকে তোপ আদিত্যর
অবশ্য এতেই শেষ নয়। জবাবি ই-মেলে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কুনাল। কড়া ভাষায় লিখেছেন, সরকারের বিবিধ নীতির জেরে দেশের ২০ শতাংশ নাগরিক দারিদ্র্যসীমার নিচে পৌঁছে গিয়েছে। মুসলিম জনসংখ্যার ২২ শতাংশ প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছেন বলেও মত প্রকাশ করেছেন তিনি। আর এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সেই সরকারের প্রধান ব্যক্তির জন্য টেবিল তৈরি করা তাঁর কাছে অনৈতিক বলে মনে হয়েছে। কারণ কুনাল নিশ্চিত জানেন, সংখ্যালঘু মানুষদের বঞ্চিত করার জন্য আরও নতুন নতুন নিয়মনীতি প্রণয়ন হবে সেই টেবিলের উপরেই।
দিল্লির পুলিশ কমিশনারের তরফ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এই ধরনের কোনও মেল পাঠানো হয়নি। কুনাল মার্চেন্টের কাছে আসা ই-মেলটিকে ভুয়ো বলেই দাবি করেছেন তিনি। এই পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।