সিঙ্গল মাদার হিসেবেই ছেলেকে বড় করছেন মা। তাই সন্তানের পাসপোর্টে যাতে তার বাবার নাম না থাকে, তেমনটাই আরজি জানিয়েছিলেন তিনি। আর মায়ের সেই আরজিতেই এবার সায় দিল দিল্লি হাই কোর্ট। যে ঘটনাকে একক মাতৃত্বের ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন অনেকে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যদিও ভারতীয় আইন মোতাবেক অনেক সরকারি নথিতেই মা অথবা বাবা, যে কারও নামই রাখা যেতে পারে। কিন্তু সমাজে চালু থাকা পিতৃতন্ত্র সে কথা সবসময় মানতে রাজি হয় না। আর সেখান থেকেই বাধে সংঘাত। স্ত্রী এবং সন্তানের অভিভাবক হিসেবে পুরুষের নাম থাকবেই, এই ভাবনা থেকে বেরোতে পারেননি অনেকেই। কোনও মানুষকে কারও অভিভাবকত্ব ছাড়া কেবল একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ হিসেবেই পরিচয় দিতে তাঁরা অস্বস্তিতে পড়েন। আর এর ফলে অনেক সময়ই সমস্যায় পড়তে হয় সেইসব মানুষদের, যাঁরা স্বেচ্ছায় বা বাধ্যত একলা চলার পথ বেছে নিয়েছেন। আর এঁদের মধ্যেই পড়েন সিঙ্গল মাদার-রা। কেবল নিজের পরিচয়ে সন্তানকে পরিচিত করতে গিয়ে তাঁরা বিভিন্ন সময়েই বাধার মুখে পড়েন। যেমনটা পড়েছিলেন এই তরুণীও।
আরও শুনুন: যন্ত্রণার দৃশ্য! শহিদ জওয়ানের চিতার উপর শুয়ে পড়লেন স্ত্রী, কেঁদে আকুল গোটা গ্রাম
সন্তান জন্মের আগেই তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন স্বামী। ছেলেকে জন্ম দেওয়া থেকে তাকে বড় করে তোলা, সবটাই একার দায়িত্বে করেছেন এই তরুণী। অথচ ছেলের পরিচয়পত্র তথা পাসপোর্টে রয়ে গিয়েছে তার বাবার নাম। যিনি সন্তানের জন্য আদৌ কোনও দায়িত্ব পালন করেননি, তাঁর নাম কেন পরিচয়পত্রে বয়ে বেড়াতে হবে সন্তানকে, এই প্রশ্ন তুলেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই তরুণী। তাঁর সন্তান যেহেতু এখনও নাবালক, তাই তার পাসপোর্ট থেকে তার বাবার নাম সরানোর দাবিতে আইনি পথেই হেঁটেছেন তরুণী। তিনি জানিয়েছিলেন, সন্তানের মুখও দেখেননি ওই ব্যক্তি। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই তাঁকে ত্যাগ করে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সন্তানের পাসপোর্টে বাবা হিসেবে ওই ব্যক্তির নাম রাখতে চান না তিনি, আর পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষও তা জোর করে চাপিয়ে দিতে পারে না। মায়ের এই দাবিতে শেষ পর্যন্ত সায় দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট।
আরও শুনুন: ৫৫০ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ব্যক্তি, ফের পিতৃত্বে ‘না’ আদালতের
দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি প্রতিভা এম সিংহের পর্যবেক্ষণ, এক্ষেত্রে বাবা সন্তানকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করে গিয়েছেন। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সন্তানের জন্মদাতা বাবার নাম নথিপত্র থেকে সরানো যেতে পারে, এমনকি বাবার নাম ছাড়া পাসপোর্ট তৈরি করাও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে সন্তানের পদবিও বদলানো যেতে পারে বলে রায় আদালতের। আইনি কাটাছেঁড়ার পরেও শেষমেশ যে একলা মায়ের দাবিকে স্বীকৃতি দিয়েছে আদালত, এই বিষয়টিকে আশাপ্রদ বলেই দেখছেন একলা মায়েরা।