নো মিনস নো। নারীর যৌনতায় সম্মতি দেওয়ার প্রসঙ্গে স্পষ্ট বলেছিলেন ‘পিঙ্ক’ সিনেমার আইনজীবী দীপক সায়গল ওরফে অমিতাভ বচ্চন। এবার সেই সুরেই আদালত সাফ জানাল, কোনও পুরুষের সঙ্গে সময় কাটানো মানেই তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে সম্মতি দেওয়া নয়। মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় তাই ওই সঙ্গ দেওয়াকে গুরুত্ব দিতে নারাজ আদালত। ঠিক কী বলেছে আদালত? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
নারীর উপরে ঘটে যাওয়া কোনও যৌন হেনস্তা, নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণের ঘটনাতেও বারে বারে একটি প্রশ্ন উঠে আসে। মেয়েটি ওখানে কী করছিল? অথবা মেয়েটি কেন ওই পুরুষের সঙ্গে ছিল? সাম্প্রতিক অতীতে এও দেখা গিয়েছে, নৃশংসভাবে কোনও মহিলাকে ধর্ষণের পর খোদ প্রশাসনিক স্তর থেকেই আগাম ঘোষণা এসেছে, ওই মহিলা নিশ্চয়ই যৌনকর্মী ছিলেন, অর্থাৎ পুরুষদের সঙ্গ দেওয়াই তাঁর পেশা। আর সেই পেশাগত লেনদেন নিয়ে বিতর্কের জেরেই এই কাণ্ড ঘটেছে। বলাই বাহুল্য, এইসব প্রশ্নের জেরে পুরো বিষয়টির অভিমুখ ঘুরে যায় অন্যদিকেই। যৌন হেনস্তা কিংবা ধর্ষণ আদতে উচিত কি অনুচিত, তার বদলে নির্যাতিতার কী করা উচিত ছিল তা নিয়েই কথা চলতে থাকে। আর এই প্রসঙ্গেই এবার নজিরবিহীন রায় দিল দিল্লি আদালত। বিচারপতি অনুপ জয়রাম ভম্বানি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, কোনও মহিলা সঙ্গ দিতে রাজি মানেই যৌন সম্পর্কেও রাজি, এমনটা নয় কখনোই। এমনকি, ওই মহিলা কত ক্ষণ বা কত দিন ওই যুবকের সঙ্গে রয়েছেন, তা-ও যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বশর্ত হতে পারে না বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।
আরও শুনুন: মন্দির-মসজিদকে বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার পুরোহিত-ইমামদের, উদ্বেগ প্রকাশ আদালতের
এর আগে রুপোলি পর্দায় দেখা গিয়েছে, কোনও যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীর এই সম্মতি দেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছিল ‘পিঙ্ক’ সিনেমাটি। সেখানে নির্যাতিতার আইনজীবী বোঝাতে চেয়েছিলেন, কোনও মহিলা পরিচিত হোন, প্রেমিকা হোন, যৌনকর্মী হোন, এমনকি তিনি যদি ওই ব্যক্তির স্ত্রীও হন, তাহলেও তিনি যৌনতায় অসম্মতি জানালে পুরুষটির আর এগোনো উচিত নয়। ওই মহিলার সঙ্গে যদি তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও থাকে, কিংবা মহিলা যদি পুরুষটিকে সঙ্গও দেন, সেক্ষেত্রেও যৌনতার ক্ষেত্রে সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে। আর ‘না’ মানে সেখানে ‘না’-ই। মহিলার সেই আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে পুরুষটি যৌনতায় লিপ্ত হলে তাকে হেনস্তা বলেই ধরা হবে। সম্প্রতি একটি মামলার প্রেক্ষিতে একই সুর শোনা গেল আদালতের রায়েও। চেক প্রজাতন্ত্রের এক মহিলার সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ উঠেছিল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্তের আইনজীবী দাবি করেন, ওই মহিলা দীর্ঘ দিন ধরে সঙ্গ দিয়েছেন তাঁর মক্কেলকে। কিন্তু সে কথাকে উড়িয়ে দিয়ে আদালতের সাফ বক্তব্য, একজন মহিলা যদি কোনও পুরুষের সঙ্গে থাকতে রাজি হন, তা সে যতদিনের জন্যই হোক, তাতেও অনুমান করা যায় না যে তিনি যৌনতায় সম্মতি দিয়েছেন।
আরও শুনুন: ছকভাঙা পথেই সাফল্য, বাইকে চড়ে ‘স্বাস্থ্যকর’ ফুচকা বিক্রি বি.টেক পাশ তরুণীর
অতীতে মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় বারবার আঙুল তোলা হয়েছে মহিলাদের প্রতিই। তাঁদের পোশাক, তাঁদের আচরণ, সবকিছু নিয়েই কথা উঠেছে। সাম্প্রতিক কালে শ্রদ্ধা হত্যার ঘটনাতেও ওই তরুণীর লিভ-ইন করার সিদ্ধান্তকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন অনেকে। কিন্তু সেইসব কুযুক্তির স্রোতে একরকম দাঁড়ি টানতে পারে দিল্লি আদালতের এই রায়, এমনটা হয়তো আশা করা যেতেই পারে।