মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি থেকে সামান্য হেডফোন। কোনও কিছুই বেশিদিন টেকে না। বড়জোর বছর খানেক। তারপর! খারাপ হয়ে যাওয়া সেসব জিনিস দিয়ে কী করি আমরা? বেশ কয়েক দিন জমিয়ে রাখার পরে হয়তো ফেলে দিই! রোজের জঞ্জালের মধ্যেই মিশে যায় তারা। সেসবের অধিকাংশই কিন্তু রিসাইকেল হয়। তবে জেনে বা না-জেনে এ বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিই না আমরা। এদিকে এই ধরনের ই-বর্জ্য কিন্তু বেশ ভাল রকমের দূষণ ছড়ায় পৃথিবীতে। এমন যদি একটা ব্যবস্থা থাকত, যেখানে নির্দ্বিধায় ফেলে আসা যেত এমনই হাজারটা খারাপ হয়ে যাওয়া ইলেকট্রনিক্স জিনিস। এবার তেমনই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে দিল্লিতে। ই-বর্জ্যের জন্য তৈরি হচ্ছে আস্ত একটা ইকো-পার্ক। কী হবে সেখানে? আসুন, শুনে নিই।
আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, সেটা প্রযুক্তির যুগ। ঘুম-চক্ষু ছেড়ে থেকে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম আমাদের নিত্য সঙ্গ দেয়। মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ তো বটেই, এখন দাঁত মাজতে পর্যন্ত আমরা শরণাপন্ন হচ্ছি ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেটের। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে এসব বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম। এসব আমাদের জীবনকে সহজ করেছে সে কথা একশো ভাগ খাঁটি। কিন্তু এই যে এত রকম ইলেকট্রনিকস গ্যাজেট, এসবেরই তো একটা এক্সপেয়ারি ডেট আছে। মোবাইল, ফ্রিজ, টিভি এসব খারাপ হয়ে গেলে আমরা ফেলে দিই, কখনও পুরনো জিনিস বিক্রিওয়ালার কাছে বেচেও দিই। কিন্তু এই যে এত এত ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য, সে সবের কী গতি হয় ভেবে দেখেছেন কখনও?
আরও শুনুন: পৃথিবীর এত জঞ্জাল সব যাচ্ছেটা কোথায়! আপনার শহরে এসে ভিড়ছে না তো বিদেশি বর্জ্য?
বাকি সমস্ত বর্জ্যের মতোই এসবও ডাঁই হয় শহরেরই কোথাও গিয়ে। জমে জমে একসময় পাহাড় হয়। দূষণের মাত্রা বাড়ায়। আমরাও না বুঝে না শুনে সাধারণ জঞ্জালের সঙ্গেই সেগুলোকি বিদায় করে দিয়ে আসি বাড়ির বাইরে। কিন্তু এ ধরনের ই-ওয়েস্ট বেশির ভাগ সময়েই রিসাইকেল করা সম্ভব। পুরনো নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিস থেকে ফের নতুন নতুন জিনিস তৈরি করে নেওয়া সম্ভব। তবে সচেতনতা ও উদ্যোগের অভাবে সেই ই-ওয়েস্ট রিসাইকেল না হয়ে পড়ে থাকে ভ্যাটে। তাছাড়া এই ধরনের গ্যাজেটের মধ্যে বেশ কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা পরিবেশের পক্ষে বেশ ক্ষতিকারকও।
এ নিয়ে নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে সম্প্রতি একটি উদ্যোগ নিয়েছে দিল্লি সরকার। রাজধানীর বুকে একটি ই-ওয়েস্ট ইকো পার্ক বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে রাজ্যের ক্ষমতাসীন সরকার। ভাবছেন নিশ্চয়ই, কী হবে সেখানে? সে রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া জানিয়েছেন, ওই পার্কে থাকবে বিভিন্ন রকম ইলেকট্রনিক্স বাতিল গ্যাজেট রিসাইকেল ও রিম্যানুফ্যাকচারিং করার কারখানা। রাজ্যের ই-বর্জ্য সামলানোর ব্যাপারটিও দেখবে এই পার্ক।
প্রতিবছর কম করে হলেও ২ লক্ষ টন ই-বর্জ্য জমে শুধু দিল্লিতেই। সেই বর্জ্যকে কীভাবে রিসাইকেল করা যায়, সেই ব্যাপারটি পুরোটাই সামলাবে দিল্লির এই পার্কটি। প্রায় ২০ একর জমির উপর তৈরি করা হচ্ছে এই বিশেষ ইকো পার্কটি। ইতিমধ্যে এই খাতে টাকাও অনুমোদন করেছে সরকার।
আরও শুনুন: সমুদ্রের বুক থেকে তুলে আনে প্লাস্টিক! মাত্র আট বছরের কন্যার কীর্তিতে অবাক বিশ্ব
ভারতবর্ষের প্রথম ই-বর্জ্য ম্যানেজমেন্ট ইকোপার্ক হতে চলেছে এটি। দীর্ঘদিন ধরেই বর্জ্য ম্যানেজমেন্ট নিয়ে বেশ কিছু চিন্তাভাবনা করে আসছে কেন্দ্র। দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের ভ্যাটকে নষ্ট করে গ্রিনজোন গড়ে তোলার কথাও ভাবা হচ্ছে। ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য রিসাইকেল করতে এই দেশে প্রথম এমন অভিনব কিছু গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাকে পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তোলার কথাও ভেবেছে সরকার।
দিল্লি দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে সব শহরেই এমন উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্র। আর তাতে হয়তো ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট থেকে ছড়ানো দূষণ খানিকটা হলেও কমবে। পাশাপাশি ই-গ্যাজেট যে জঞ্জালের ভ্যাটে ফেলার জিনিস নয়, এ নিয়েও সচেতনতা বাড়বে মানুষের মধ্যে। এর আগেও ইলেকট্রনিক্স জিনিস রিসাইকেল নিয়ে নানা ধরনের প্রচার চলেছে। তবে সচেতনতা বাড়েনি। দেখা যাক, এই ই-ওয়েস্ট ইকো পার্ক সেই সচেতনতা কতটা বাড়াতে পারে। তবে এমন একটি প্রকল্প ঘিরে কিন্তু বেশ আশাবাদী সরকার।