বছর তিনেক আগেই ‘তিন তালাক’ প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তারপরও সেই রায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এর সুবিধা নিয়ে চলেছে কেউ কেউ। সম্প্রতি দিল্লিতে ফের ঘটল তিন তালাক দিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা। আর তার নেপথ্যে আছে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জের। ঠিক কী ঘটেছিল? আসুন শুনে নিই।
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে ফেলেছেন স্ত্রী। তাই ‘তালাক’ দিয়ে তাঁর সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্কে ইতি টেনেছেন দিল্লির এক চিকিৎসক। অসহায় মহিলা বাধ্য হয়েই দ্বারস্থ হন পুলিশের। সবিস্তারে স্বামীর বেআইনি কাজের কথা তিনি পুলিশকে জানান। তাঁর অভিযোগের ভিত্ততেই এবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেন ওই চিকিৎসক।
আরও শুনুন: নিজে নয়, প্রেমের চিঠি লিখতে ভরসা অন্য কেউ! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারসাজিতে ঠকলেন কারা?
ঘটনাটি আগে ঘটলেও ভয় ও লজ্জায় এতদিন কিছুই প্রকাশ্যে আনেননি অভিযুক্ত চিকিৎসকের স্ত্রী। তাঁর বয়ান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে তাঁদের প্রথম আলাপ। সেই সময় নিজেকে চিকিৎসক হিসাবেই পরিচয় দিয়েছিলেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। একইসঙ্গে জানিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। এভাবে বছর দুয়েক মেলামেশার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ২০২০ সালে বিয়েও হয় তাঁদের। দুজনে একসঙ্গে দিল্লির লাজপত নগরে একটি বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। গতবছরের মাঝামাঝি সময় অভিযুক্ত চিকিৎসক তাঁর স্ত্রী-কে জানান, পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য তাঁকে অন্যত্র যেতে হবে। এবং এক্ষেত্রে তাঁকে একাই যেতে হবে। সেই মতো স্ত্রী-কে লাজপত নগরের বাড়িতে রেখেই দিল্লির অন্য প্রান্তে চলে যান তিনি। প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও, দিন কয়েক পেরোতেই স্বামীর ব্যবহারে অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করেন ওই মহিলা। উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে সন্দেহের পারদ। এর কিছুদিনের মধ্যেই স্বামীর নতুন ঠিকানায় হাজির হন তিনি। আর সেখানে যেতেই তাঁর কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যায়। দেখেন, তাঁর স্বামী অন্য এক মহিলাকে নিয়ে থাকতে শুরু করেছেন। এদিকে, স্ত্রী-কে এভাবে দেখতে পাবেন এমনটা একেবারেই আশা করেননি অভিযুক্ত ব্যক্তি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে চলে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। রীতিমতো শারীরিক হেনস্তাও করা হয় বলে অভিযোগ। এরপরই তাঁকে উদ্দেশ্য করে অবৈধ ওই তিনটি শব্দ উচ্চারণ করেন। তিনবার তালাক বলে স্ত্রী-র সঙ্গে তৎক্ষণাৎ বিচ্ছেদ ঘোষণা করেন তিনি।
আরও শুনুন: নেকলেসের উপরে স্টেথোস্কোপ, কনের সাজেই পরীক্ষা দিতে হাজির তরুণী
সেই মুহূর্তে অপমানিত হয়ে সেখান থেকে ফিরে যান মহিলা। এক্ষেত্রে ঠিক কী যে করণীয়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তিনি। ফলে ঘটনার পর বেশ কিছুদিন কাটলেও কোনও পদক্ষেপ করেননি। সম্প্রতি সব ঘটনা সবিস্তারে জানিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। শেষপর্যন্ত বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়। জানা গিয়েছে, সেদিন আমেরিকা চলে যাওয়ার বিমান ধরতেই সেখানে হাজির হয়েছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, তিন তালাক আইন না-মানার পাশাপাশি, আরও কিছু ধারা মোতায়েন করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। যদিও এতে কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর। গ্রেপ্তারির পরেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, ওই মহিলার সঙ্গে আর থাকতেই চান না তিনি। আইন ভেঙে গ্রেপ্তার হয়েও বিবাহ-বিচ্ছেদই চেয়েছেন ওই ব্যক্তি।