শেষ পর্যন্ত সবরমতী আশ্রম থেকে সরেই যেতে হচ্ছে দলিতদের। ১০০টিরও বেশি দলিত পরিবারকে সরিয়ে দিয়ে এই ঐতিহাসিক আশ্রমের সৌন্দর্যায়ন ঘটানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র, শেষমেশ তাতেই শিলমোহর দিল আদালত। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সমাজের অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে যাদের হরিজন বলে সম্মান দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী, এবার তাদেরই আর ঠাঁই হবে না গান্ধী-প্রতিষ্ঠিত সবরমতী আশ্রমে। এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে আগাগোড়া সাজিয়ে তুলতে ১৩০০ কোটি টাকা বাজেটের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে কেন্দ্র। আর সেই কারণেই আশ্রমের জমিতে বসবাসকারী দলিত পরিবারগুলির উপরে নেমে এসেছে উচ্ছেদের খাঁড়া। কেন্দ্র ও গুজরাতের বিজেপি সরকারের এহেন উদ্যোগের বিরোধিতা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের পক্ষেই রায় দিল আদালত। যে রায়ের দরুন, সবরমতী আশ্রম চত্বর থেকে শতাধিক দলিত পরিবারকে সরিয়ে দিতে আর কোনও বাধা রইল না সরকারের।
আরও শুনুন: নবরাত্রিতে গরবা নাচতে হলে লাগবে পরিচয়পত্র, ‘লাভ জিহাদ’ রুখতে ফরমান মন্ত্রীর
মহাত্মা গান্ধীর প্রতিষ্ঠিত সবরমতী আশ্রমকে ‘বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বড়সড় প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সবরমতী আশ্রম ও লাগোয়া পাঁচ একর জমিতে ওই ‘উন্নয়ন প্রকল্পের’ জন্য খরচ হবে আনুমানিক ১,৩০০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্নের প্রকল্পে শান দিতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গুজরাট সরকারকে নির্দেশ করে, ওই আশ্রমে পাঁচ প্রজন্ম ধরে যে দলিত পরিবারগুলি বাস করে আসছে, তাদের আশ্রম থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু এর মধ্যেই বিজেপি সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে গুজরাট হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন মহাত্মা গান্ধীর প্রপৌত্র তুষার গান্ধী। তাঁর অভিযোগ, সরকার যে পদক্ষেপ করছে, তা গাঁধীর মতাদর্শ এবং জীবনধারার পরিপন্থী। এদিকে সবরমতী আশ্রম চত্বরেই রয়েছে পাঁচটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দপ্তরও। গাঁধীর আদর্শের অনুপ্রেরণায় নানা গঠনমূলক কর্মসূচি চালায় ওই সংস্থাগুলি। কেবল দলিত পরিবারগুলির বসতিই নয়, সবরমতীর সৌন্দর্যায়ন ঘটাতে গেলে উচ্ছেদ করা হতে পারে ওই সংস্থাগুলিকেও। সেই কারণেই সবরমতীর উন্নয়ন প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিল ওই সংস্থাগুলিও। কিন্তু শুক্রবার মামলার শুনানিতে তুষার গান্ধীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে গুজরাট হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি অরবিন্দ কুমারের বেঞ্চ।
আরও শুনুন: কন্যাভ্রূণ হত্যার নিরিখে মুসলিমদের তুলনায় এগিয়ে হিন্দুরা, চাঞ্চল্যকর তথ্য মার্কিন সমীক্ষায়
যদিও গুজরাট সরকার জানিয়েছে, প্রতিটি পরিবার এবং সংস্থার পুনর্বাসনের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সেই আশ্বাস ছাপিয়ে উচ্ছেদের আশঙ্কাই আপাতত বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে সবরমতীর বাসিন্দাদের কাছে।