প্রত্যন্ত গ্রামের দলিত পরিবার থেকে আইআইটি-র দরজা খুলে যাওয়া। তরুণের সেই উজ্জ্বল স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়েছিল ফিজ জমা দিতে না পেরে। এই পরিস্থিতিতেই যোগীরাজ্যের ওই পড়ুয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন খোদ শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। শুনে নেওয়া যাক।
যোগীরাজ্যের গ্রামের দলিত পরিবার থেকে আইআইটি-তে পড়ার সুযোগ পাওয়া স্বপ্নের মতোই। সেই স্বপ্নই হাসিল করেছিলেন বছর আঠেরোর তরুণ। কিন্তু স্বপ্নের দাম দেওয়াও যে সহজ কথা নয়! আর সেই দাম দিতে না পেরেই স্বপ্নের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে কথায় বলে, কোনও একটা দরজা বন্ধ হলে আরেকটা দরজা কখনও কখনও খুলে যায়। তেমনটাই হয়েছে এই যুবকের বেলায়। থমকে দাঁড়ানোর এই সময়েই তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন খোদ শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। আশ্বাস দিয়েছেন সাহায্যের।
কী ঘটেছে ঠিক?
জানা গিয়েছে, অতুল কুমার নামের ওই পড়ুয়া উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের তিতোরা গ্রামের বাসিন্দা। বাবা মিরাটে শ্রমিকের কাজ করেন। একে গরিব, তায় দলিত। সবরকম প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেই পড়াশোনা চালিয়ে এসেছেন অতুল। সেই পরিশ্রমের ফলও মিলেছে। আইআইটি ধানবাদে ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পান তিনি। কিন্তু দেখা যায়, ভরতি হওয়ার জন্য সাড়ে ১৭ হাজার টাকার প্রয়োজন। শ্রমিকের সামান্য আয়ে এই টাকা জোগাড় করাও প্রায় অসম্ভব। অতুল ধরেই নিয়েছিলেন, সুযোগ পেলেও আইআইটি-র দরজা দিয়ে ঢোকা হবে না তাঁর। কিন্তু জীবন তাঁকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছিল। অতুলের সমস্যার কথা জানতে পেরে গোটা গ্রাম তাঁর পাশে দাঁড়ায়। গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে ওই টাকা জোগাড় করেন। কিন্তু টাকা জোগাড় করতে করতে অ্যাডমিশনের প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য আর বেশি সময় ছিল না। অতুল অনলাইনে যখন সেই প্রক্রিয়া সারছেন, নিজের যাবতীয় নথিপত্র আপলোড করছেন, তার মধ্যেই ওয়েবসাইটের গোলযোগে কাজ থমকে যায়। এদিকে তখন অ্যাডমিশন নেওয়ার সময়সীমা শেষ হতে আর কয়েক মিনিট বাকি। যান্ত্রিক গণ্ডগোলের জেরে সেই সময়ের মধ্যে বাকি কাজ করে উঠতে পারেননি অতুল।
কিন্তু এবার আর তিনি হাল ছেড়ে দেননি। যান্ত্রিক ত্রুটির কথা জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই পড়ুয়া। প্রথমে ঝাড়খণ্ড হাই কোর্ট, সেখান থেকে মাদ্রাজ হাই কোর্ট, অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়েছেন অতুল। তাঁর এই পরিস্থিতির কথা খোদ প্রধান বিচারপতির কানেও পৌঁছেছে। আর তারপরেই ওই পড়ুয়াকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চন্দ্রচূড়। এর আগেও, চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ একইরকম পরিস্থিতিতে এক দলিত পড়ুয়াকে বম্বে আইআইটি-তে ভরতি হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। এবারও তেমন পদক্ষেপ করা হয় কি না, সেই আশায় বুক বাঁধছেন যোগীরাজ্যের দলিত পড়ুয়া।