শাশুড়ি এবং শ্বশুরবাড়ির সেবা করতে বাধ্য কোনও স্ত্রী। সেই পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়াকে এ দেশের সংস্কৃতি মান্যতা দেয় না। সম্প্রতি বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় এক বধূকে এমনই বক্তব্য শোনাল আদালত। কোন প্রেক্ষিতে এহেন পর্যবেক্ষণ আদালতের? শুনে নেওয়া যাক।
কথায় বলে, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’। এ কথা কতখানি ঠিক, গোটা পরিবারের সুখের ভার কেবল একজনের উপর বর্তানো উচিত কি না, তা নিয়েও কম কথা হয় না। তবে সম্প্রতি এক বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় প্রায় এ কথাই টেনে আনল আদালত। সাফ জানিয়ে দিল, পরিবারে যাই হোক না কেন, শাশুড়ি ও দিদিশাশুড়ির সেবা করা কোনও বধূর পক্ষে বাধ্যতামূলক। তাঁদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা থাকা উচিত নয়। অন্তত এ দেশের সংস্কৃতি তেমনই বিধান দিয়েছে বলে রায় আদালতের। ওই বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় ভারতীয় সংস্কৃতির কথা বলেই বধূকে কর্তব্য মনে করালেন বিচারপতি। মনুস্মৃতি উদ্ধৃত করে আদালতে বলা হয়েছে, যদি কোনও সংসারে বধূ ভালো না হন, তবে সেই সংসার তছনছ হয়ে যায়। এই মহিলা যে বিচ্ছেদ চাইছেন, তাকে ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী বলে দাবি করে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, স্বামীর থেকে আর ভাতাও পাবেন না ওই মহিলা।
-: আরও শুনুন :-
বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে শতাধিক রামায়ণ, রামকে কেন্দ্র করেই জারি ভিন্নমতের অধিকারও
সত্যি বলতে, কোনও সম্পর্কের ভিতরের পরিস্থিতি ঠিক কেমন, বাইরে থেকে তা পুরোপুরি বোঝা মুশকিলের। যত ভাবনাচিন্তা করেই বিয়ের পথে হাঁটা যাক না কেন, এ দেশে বিচ্ছেদের হার ইদানীং কালে কম নয়। কখনও যুগলের মধ্যে সমস্যা, কখনও আবার পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে সমস্যার কারণে অনেকে বিচ্ছেদের কথা ভাবেন। সেভাবেই বিবাহবিচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই মহিলা। বিবাহবিচ্ছেদের পরে ফ্যামিলি কোর্ট ওই ব্যক্তিকে স্ত্রী এবং নাবালক সন্তানের ভরণপোষণের খরচ জোগাতে নির্দেশ দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, স্ত্রীকে ৩০ হাজার টাকা এবং সন্তানের দেখভালের জন্য আরও ১৫ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে দিতে হবে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। আর সেই মামলার রায় আদৌ মহিলার পক্ষে যায়নি। বরং শুনানিতে বধূকে তাঁর কর্তব্য বোঝাল ঝাড়খণ্ড হাই কোর্ট। আদালতের বক্তব্য, স্বামীর কাজে উৎসাহ দেওয়া থেকে শুরু করে, তাঁকে বোঝা এবং তাঁর সর্বক্ষণের আদর্শ সঙ্গিনী হয়ে ওঠা স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর পরিবারের দেখভালের দায়িত্বও বধূর উপর বর্তায় বলেই কার্যত মত বিচারপতি সুভাষ চাঁদের। তাঁর বক্তব্য, স্বামীর সংসারে বয়োজ্যেষ্ঠদের সেবা করাই বধূর ধর্ম। সে পরিবার থেকে তাঁদের বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকাকে কার্যত অনুমোদন দিতে নারাজ বিচারপতি। তাঁর বক্তব্য, খুব যৌক্তিক কারণ ছাড়া স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ চাওয়াও এ দেশের সংস্কৃতির পরিপন্থী।
-: আরও শুনুন :-
নারী কি সম্পত্তি, না যৌনসুখের সামগ্রী! ধর্ষণ রুখতে ভাবনায় বদল হোক, মত আদালতের
যদিও অভিযোগকারিণী জানিয়েছিলেন, শ্বশুরবাড়িতে নানাভাবেই দুর্ব্যবহার সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। এমনকি পণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করেও তাঁর উপর চাপ দেওয়া হত বলে অভিযোগ। আদতে দু-পক্ষের বক্তব্যই নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখার কথা আদালতের। কিন্তু এক্ষেত্রে বিচারপতি যেভাবে মনুস্মৃতি টেনে ওই মহিলাকে স্ত্রীর কর্তব্য বোঝানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, তা কোথাও গিয়ে নিরপেক্ষতাকে ছাড়িয়ে কি নীতিবাগীশতা হয়ে দাঁড়াল? উঠছে এমন প্রশ্নই।