যুদ্ধ প্রায় বাধে বাধে! রাশিয়া-ইউক্রেনের ভিতর সম্প্রতি যে সংঘাত ঘনিয়ে উঠেছে, তাতে উদ্বিগ্ন গোটা বিশ্ব। যুদ্ধ শেষমেশ হবে কি-না, তা নিয়ে এখনও যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়ে আছে। এই সংঘাতের দরুণ, ভারত যে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমন সম্ভাবনা প্রায় নেই। তবে হ্যাঁ, এর আঁচ পড়তে পারে ভারতীয়দের রান্নাঘরেও। কীভাবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বহুদূরের দেশ রাশিয়া এবং ইউক্রেন। দুই দেশের মধ্যেই বেধেছে দারুণ সংঘাত। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রায় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে বলা যায়। যদিও সম্প্রতি শোনা গিয়েছে যে, রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আবার পালটা মত হল যে, সেনা প্রত্যাহারের খবরটাই ভুয়ো। এরমধ্যেই আবার শুরু হয়ে গিয়েছে ‘হাইব্রিড ওয়ার’। সাইবার হানার কবলে পড়েছে ইউক্রেন। আর তাতে যে হাত আছে পুতিনের দেশেরই, এমনটাই সন্দেহ করছে ইউক্রেন। এহেন সংঘাতময় পরিস্থিতি গোটা বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলবে সেটাই স্বাভাবিক। ভারতও চিন্তিত। এই সংঘাত দেশগুলির পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্কে কতটা বদল আনবে, আগামী সময়েই তা স্পষ্ট হবে। তবে এই পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের আর একটা বিষয়েও যথেষ্ট চিন্তার কারণ আছে। কেননা এই সংঘাতের আঁচ ঘুরিয়ে এসে কিন্তু পড়তে পারে ভারতীয় রান্নাঘরেও।
আরও শুনুন – এভাবেই ‘বেঁচে থাকুক’… বিয়ের আসরে মৃত মেয়ের অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত মা-বাবার
ভারতীয়দের রান্নাঘরে ভোজ্য তেল হিসাবে দারুণ কদর সানফ্লাওয়ার অয়েল বা সূর্যমুখী তেলের। পাম তেলের পরেই এর জায়গা। আর সেই তেলের অধিকাংশটাই আমদানি করা হয় ইউক্রেন থেকে। ২০২১ সালের তথ্য জানাচ্ছে, ভারত প্রায় ১.৮৯ মিলিয়ন টন সূর্যমুখী তেল আমদানি করেছে, যার ৭৪ শতাংশই এসেছে ইউক্রেন থেকে। আমাদের দেশে সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন মোট চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ মেটাতে পারে। এদিকে দেশে এই ভোজ্য তেলের চাহিদা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা তার অন্যতম কারণ। ভোজ্য তেল হিসাবে সানফ্লাওয়ার অইয়েল তাই ভারতীয়দের রান্নাঘরেই জাঁকিয়েই বসেছে বলা যায়। ২০২২-২০২৭ এর মধ্যে এই তেলের বাজারে অন্তত ৭.৬ শতাংশ বৃদ্ধি হতে পারেই বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান। কিন্তু মুশকিল হয়েছে এই রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ঘনিয়ে ওঠায়। প্রত্যাশিত মাত্রায় আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে সাপ্লাই চেনে, তার ফলে এই ভোজ্য তেলের দামও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও শুনুন- সোনার হার তাঁর সিগনেচার, কেন হার এত পছন্দ করতেন বাপি লাহিড়ী?
ভারত অবশ্য ইতিমধ্যেই ইউক্রেন ছাড়া অন্য দেশ থেকে সূর্যমুখী তেল আমদানি করার চিন্তাভাবনা করেছে। সেই তালিকায় যে দুটি দেশ আছে, তার মধ্যে একটি হল রাশিয়া। ফলে এখান থেকে আমদানির ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা। অপর দেশটি হল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেখানে এই ভোজ্য তেলের উৎপাদন সীমীত। ফলে ভারতের চাহিদা অনুযায়ী যে আমদানি করা সম্ভব হবে, এমনটা এখনই ভাবা যাচ্ছে না।
ইউক্রেনের সমস্যা যতদিন না মিটছে, ততদিনে এই ভোজ্য তেলের বাজারে আশঙ্কার মেঘ থেকেই যাচ্ছে। ভারত চেষ্টা করছে বটে এই সমস্যা সমাধানের, তবে আপাতত কোনও বিকল্পের সন্ধান নেই। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত যদি আরও বেশ কিছুদিন চলতে থাকে, ভারতীয়দের রান্নাঘরে যে তার আঁচ পড়বে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।