পেশায় পুলিশ। কিন্তু তাঁর কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে মৃতদেহের সৎকার করা। পাঁচ বছর ধরে এই কাজই করে আসছেন তিনি। একশোরও বেশি বেওয়ারিশ মৃতদেহের শেষকৃত্য সম্ভব হয়েছে তাঁরই জন্য। যে কাজটি কোনও মেয়ে করতে পারেন এমনটা ভাবতেই রীতিমতো অসুবিধা হয়, সেই কাজ করেই প্রশংসা কুড়োলেন দেশের এই মহিলা কনস্টেবল। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
একসময় শ্মশানে যাওয়াই নিষিদ্ধ ছিল কোনও মেয়ের। আসলে মৃত্যু বিষয়টিই যথেষ্ট যন্ত্রণার। এদিকে সাধারণভাবে নারীকে বেশি আবেগপরায়ণ বলেই মনে করা হয়। তাই মৃতদেহের সৎকারের মতো অস্বস্তিকর দৃশ্য সহ্য করাও তাঁদের পক্ষে কষ্টকর, এমনটাই ধারণা ছিল। কিন্তু সেই ধারণাকেই ভেঙে দিয়েছেন এই মহিলা। মৃতদেহের সৎকার করার মতো কঠিন কাজটির দায়িত্বই নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন তিনি। যদিও এটি তাঁর পেশা নয় একেবারেই। পেশাগতভাবে একজন পুলিশ কনস্টেবল তিনি। কিন্তু সেই সূত্রেই এই কাজ করে চলেছেন ওই মহিলা। যে সমস্ত মৃতদেহ বেওয়ারিশ অবস্থায় পড়ে থাকে দিনের পর দিন, তাদেরই শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন তিনি। এমনকি তার জন্য যাবতীয় খরচও বহন করেন তিনি এবং তাঁর জনাকয়েক সহকর্মী। এই কাজ তাঁর পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে না পড়লেও একে নিজের মানবিক দায়িত্ব বলে মনে করেন আমিনা নামের ওই মহিলা। আর এই দায়িত্ব পালনের জন্যই এবার পুলিশ বিভাগের তরফ থেকে সম্মানিত হলেন তিনি।
আরও শুনুন: বন্দিদের যৌনদাসী হিসেবে ধর্ষিতা হয়েছেন বারবার, বিস্ফোরক অভিযোগ জেলের মহিলা রক্ষীর
২০১০ সালে তামিলনাড়ু পুলিশ বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন ওই মহিলা। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে মেডিকো-লিগ্যাল ডিউটির ভার দেওয়া হয়। অর্থাৎ সহজ কথায় দুর্ঘটনা বা খুনের দরুন পাওয়া মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখভাল করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। সেই সূত্রে কোয়েম্বাটোর এবং মেত্তুপালায়ামের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালেই বিভিন্ন সময়ে পোস্টিং হয়েছে তাঁর। ময়নাতদন্ত হয়ে যাওয়ার পর পরিবারের লোকের হাতে মৃতদেহ হস্তান্তর করতেন তাঁরা। কিন্তু অনেকসময়য়ই এমন হয় যে সেই দেহের কোনও দাবিদার মেলে না। আর এই বিষয়টিই তাঁকে পীড়া দিত বলে জানিয়েছেন আমিনা। তিনি মনে করেন, প্রতিটি দেহের অন্তত শেষকৃত্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আর তাই সেই কাজের ভার নিজের হাতেই তুলে নিয়েছেন তিনি। কয়েকজন সহকর্মী এবং জীবা জ্যোতি ট্রাস্টের কিছু স্বেচ্ছাসেবীর সহযোগিতায় পাঁচ বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন আমিনা। ময়নাতদন্তের পর স্থানীয় প্রশাসন থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন তাঁরাই, এবং প্রশাসনের নির্দিষ্ট করা জায়গায় দেহটির অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন করেন। প্রতিটি সৎকারে অন্তত হাজার দেড়েক টাকা খরচ হয় বলেই জানিয়েছেন আমিনা, যে ব্যয় বহন করেন তিনি ও তাঁর ওই সহকর্মী পুলিশেরা। গত পাঁচ বছরে এইভাবেই একশোরও বেশি বেওয়ারিশ মৃতদেহের সৎকার করেছেন আমিনা ও তাঁর সহযোগীরা।
আরও শুনুন: স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর কৃষ্ণের ছবি, বিতর্কের মুখে ‘মাসুম সওয়াল’ ছবির পোস্টার
যদিও আমিনা একে আদৌ কোনও বড় কাজ বলে মনে করেন না। তাঁর কথায়, কোনও কোনও কাজ তাঁর পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, আর কোনও কোনও কাজ তাঁর মানবিক কর্তব্য। পরিবার-পরিজনের কাছে ঠাঁই না হওয়া মৃতদেহের শেষকৃত্য করাকে সেই মানবিক কর্তব্য হিসাবেই স্বীকৃতি দিয়েছেন ওই মহিলা কনস্টেবল।