টিকিট ছাড়া যদি কেউ ট্রেনে উঠেছেন তো তাঁর হাত থেকে রক্ষা নেই। বহু টিকিট পরীক্ষকই আছেন, যাঁরা টিকিটবিহীন যাত্রীদের কারসাজি ধরে ফেলেন। কিন্তু সবার মধ্যে আলাদা করে নাম করতে হয় মহম্মদ শ্যামচাঁদের। ১১ মাসে তিনি জরিমানা বাবদ আয় করেছেন ১ কোটি টাকারো বেশি। টাকার অঙ্কে জরিমানা আদায়ে রেকর্ড করেই ফেলেছেন তিনি। আসুন শুনে নেওয়া যাঁক তার কথা।
এককালে ভালো হকি খেলতেন। সেন্ট্রাল রেলওয়েজ হকি দলের মাঝমাঠে দাপিয়ে বেড়াতেন। সেই খেলোয়াড়ি স্ট্যামিনাকে কাজে লাগিয়েই এবার এক অনন্য নজির গড়ে ফেললেন মহম্মদ শ্যামচাঁদ। তিনি রেলের টিকিট পরীক্ষক। টিকিটবিহীন যাত্রীদের থেকে জরিমানা আদায় করেছেন প্রায় কোটি টাকা। এই প্রথম একজন টিকিট পরীক্ষক এইরকম কোটি-টাকার ক্লাবে ঢুকলেন, যা একরকম নজিরই বলা যায়।
আরও শুনুন: যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ! প্রাণভয়ে সন্তানকে নিয়ে ঘরছাড়া প্রাক্তন ইউক্রেন-সুন্দরী
রেলের সব যাত্রী একরকম হন না। কেউ কেউ নিয়মাকানুন মানেন। অনেকেই আবার ফাঁকি দিয়ে চোখ এড়িয়ে যান। টিকিট পরীক্ষকদের কাজ হল এই দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষকে চিহ্নিত করা। লক্ষ লক্ষ যাত্রীদের মধ্যে থেকে তাঁদের খুঁজে বের করা খুব সহজ কথাটি নয়। সেই কঠিন কাজটিই সাফল্যের সঙ্গে করেছেন এই পরীক্ষক। ২০০০ সালে তিনি রেলের পরীক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন। তারপর থেকে মন দিয়ে নিজের কাজটিই করে চলেছেন।.এবং কাজের প্রতি তাঁর নিষ্ঠার প্রমাণ মেলে জরিমানা বাবদ আদায় হওয়া টাকার অঙ্কেই। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ এর এপ্রিল থেকে ২০২২ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি মোট ১৩, ৪৭২ জন টিকিটবিহীন যাত্রীকে পাকড়াও করেছেন। এর মধ্যে এমন কিছু যাত্রী ছিলেন, যাঁরা যে কমপার্টমেন্টে ভ্রমণ করছেন সেখানকার টিকিট তাঁদের কাছে ছিল না। আবার আদৌ টিকিট কাটেননি, এমন যাত্রীও ছিল। শ্যামচাঁদ এখন যে পদে আছেন, তাতে তিনি লোকাল ট্রেন এবং দূরপাল্লার ট্রেন – দু-ধরনের ট্রেনের যাত্রীদেরই টিকিট পরীক্ষা করতে পারেন। তবে ওই যে, আগে যে কথা হচ্ছিল, যাত্রীদের নিয়ে সেটাইকেই বেশি গুরুত্ব দেন তিনি। বহুরকম যাত্রীর ভিতর থেকে টিকিটহীন যাত্রীদের চিনে ফেলা সহজ নয়। শ্যামচাঁদ বলছেন, তাঁর খেলোয়াড়ি জীবন এই কাজে বেশ সাহায্য করেছে। এক তো স্পোর্টম্যান স্পিরিট তাঁর কাজে গতি এনেছে, মনোবল জুগিয়েছে। অন্যদিকে খেলার মাঠে যেভাবে তৎপর থাকতে হত তাঁকে, সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি মেলে রাখতে হত মাঠের চারিদিকে, সেই গুণ কাজে লেগেছে এখানেও। সব মিলিয়ে জরিমানা বাবদ তিনি রেলের ঘরে ঢুকিয়েছেন ১ কোটি টাকারও বেশি।
আরও শুনুন: পাঁচ পা নিয়েই দিব্যি ছুটে বেড়াচ্ছে ভেড়া! দেখে অবাক নেটদুনিয়া
কোটি-টাকার ক্লাবে ঢুকে প্রত্যাশিত ভাবেই তিনি খুশি। অন্য টিকিট পরীক্ষকদের কাছে নিশ্চিতই তিনি উদাহরণ। তবে, তাঁর কথায়, প্রত্যেকটা যাত্রী আলাদা। প্রত্যেকের ব্যবহারও আলাদা। তাই তাঁর কাজ মানে প্রতিদিন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা কাটান তিনি। রেকর্ড গড়ে আগামিদিনেও নয়া চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে তৈরি এই সেলিব্রিটি টিকিট পরীক্ষক।