ভারতে বসে কাজ করছেন পাকিস্তানের চর হিসেবে। এই সন্দেহেই আটক হয়েছিলেন তিনি, অথচ বাইশ বছর পর বসতে চলেছেন বিচারপতির আসনে। কে সেই ব্যক্তি, আসুন শুনে নেওয়া যাক।
গুপ্তচরবৃত্তি করতে গিয়ে ধরা পড়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এক সংস্থা থেকে অন্য সংস্থা, এক দেশ থেকে অন্য দেশে গোপনে বিভিন্ন তথ্য হাতের মুঠোয় আনতে গুপ্তচর পাঠানো হয়। সেখানে ওই দুই দেশের নাম যদি ভারত আর পাকিস্তান হয়, তাহলে যে সেখানে খানিকটা বাড়তি উত্তেজনা যোগ হয়, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এমনই একজন পাক গুপ্তচরকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ভারতের মাটিতে। ধরা পড়ার পর তাঁকে পুরে দেওয়া হয় জেলে। কিন্তু, ২২ বছর বাদে সেই ব্যক্তিই নাকি হতে চলেছেন খোদ বিচারপতি!
শুনতে গল্পের মতো মনে হচ্ছে তো? গল্পের মতো মনে হলেও এ কিন্তু আদৌ কোনও গল্প নয়। একেবারে সত্যি ঘটনা।
বিচারাধীন অপরাধীদের সংশোধনাগারে রাখার কথা সকলেই জানা আছে। লক্ষ্য, অপরাধের অন্ধকার জগৎ থেকে তাঁদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা। অপরাধপ্রবণতার সঙ্গে গারদ এবং সংশোধনাগারের সম্পর্ক বেশ মজবুত। কিন্তু গারদে পোরার পর যদি দেখা যায় যে, আসলে কোথাও একটা গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছে? আসলে কোনও দোষই নেই সেই ব্যক্তির? তবে তো তাঁকে বেকসুর খালাস না করে উপায়ই থাকে না! আর ঠিক এমনটাই ঘটেছিল এক ব্যক্তির সঙ্গে। এমনকী, গারদবাসের অভিজ্ঞতা থাকলেও শেষাবধি সেই ব্যক্তিকে বিচারপতির আসনে বসাতে বাধ্য হয়েছে কমিশন।
ব্যক্তির নাম প্রদীপ কুমার। ২০০২ সালের ১৩ জুন মিত্র গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং এস.টি.এফ এবং সামরিক গোয়েন্দাদের যৌথ অভিযানে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ খুব স্পষ্ট। গুপ্তচরবৃত্তি ও রাষ্ট্রদ্রোহ। ভারতের গোপন খবর তিনি পৌঁছে দেন পাকিস্তানের কাছে, এমনই খবর ছিল পুলিশের কাছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বাবার চাকরিটিও চলে যায়। তবে তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগের নেপথ্য কারণ ছিল খুব সামান্যই! প্রদীপ কুমার কিছু বাড়তি রোজগারের আশায় ফয়জল ইলাহী নামক এক ব্যক্তির দোকানে কাজ করতেন। কাজ ছিল টেলিফোনে কিছু সংবাদ দেওয়া-নেওয়া করা। আর এখানেই বাধে বিপত্তি! পুলিশকর্তার ধারণা হয়, এই আদানপ্রদান আসলে কানপুর সেনানিবাসের খবর। শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা। চলে ২০১৪ সাল অবধি।
আরও শুনুন: নিরামিষ খেয়ে পুরস্কৃত, আবার সংবিধান থেকে যুক্তিও দিলেন প্রাক্তন প্রাক্তন বিচারপতি
আর তারপর সরাসরি নির্দোষ প্রমাণিত হন তিনি। একদিনও সময় নষ্ট করেননি প্রদীপ। মুক্তি পাওয়ার দু-বছরের মাথায় প্রদীপ উত্তরপ্রদেশের হায়ার জুডিশিয়াল সার্ভিসের পরীক্ষায় বসেন। শুধু তাই নয়, একেবারে তাক লাগানো ফলও করেন। মেধাতালিকার ২৭ নম্বর স্থানে উত্তীর্ণ হন তিনি। তবে এই নজরকাড়া ফলাফলের পরেও কিন্তু থামেনি তাঁর লড়াই। তাঁকে দেওয়া হয়নি সেই চাকরির নিয়োগপত্র। কারণ সেই পুরনো জেল-বিড়ম্বনা! ২০১৯ সাল অবধি গড়ায় এই সমস্যা। তবে হাল ছাড়েননি প্রদীপ। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর শেষমেশ জট কাটে। বিচারপতি সৌমিত্র দয়াল এবং বিচারপতি দোনাদি রমেশের আদেশে হাইকোর্ট থেকে নির্দেশ আসে তাঁকে চাকরিতে নিয়োগ করার জন্য। ইউপি উচ্চ বিচারবিভাগীয় পরিষেবার অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে তিনি নিযুক্ত হবেন, এমনই জানা গিয়েছে।
বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার জন্য আমরা বহুসময়েই তার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলি। কিন্তু ধৈর্যের ফল যে আখেরে মিঠে হয় সেই কথাই যেন আরেকবার প্রমাণিত হয়ে গেলো প্রদীপ কুমারের হাত ধরে।