‘বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না…’ গানের কথায় এমনটা মানায়। কিন্তু বাস্তবে? বন্ধু না থাকলে সত্যিই কি বেঁচে থাকা দায় হয়? সাম্প্রতিক ঘটনা বলছে,অবশ্যই হয়। বন্ধুর মৃত্যু মানতে না পেরে সত্যি সত্যিই প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন এক ব্যক্তি। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন শুনে নিই।
দাউ দাউ করে জ্বলছে এক ব্যক্তির চিতা। চারপাশে চেনা মানুষের ভিড়। সেখানে রয়েছেন তাঁর বন্ধুরাও। হঠাৎ সবাইকে অবাক করে তাঁদের মধ্যে একজন ঝাঁপ দিলেন চিতায়। সবাই হইহই করে উঠল। কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ। চিতায় ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ দিলেন তাঁরই এক বন্ধু।
আরও শুনুন: বজরং দলের সদস্য হয়েও মুসলিম বান্ধবী! কর্ণাটকে বেধড়ক মার যুবককে
ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের আগ্রার। সেখানকার নাগলা খানগার এলাকার বাসিন্দা অশোক দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগছিলেন। মারণরোগেই শেষ পর্যন্ত প্রাণ হারান বছর ৪২-র এই ব্যক্তি। পুলিশ সূত্রে খবর যমুনা নদীর তটে অশোকের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করা হয়। তাঁর পরিবারের লোকজন-সহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর কাছের বন্ধুরাও। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন বছর ৪০-র আনন্দ নামে এক ব্যক্তি। অশোকের সঙ্গে তাঁর বহুদিনের পুরনো সম্পর্ক। দুজনকে অভিন্ন আত্মা বলা চলে। তাই হঠাৎ করে অশোকের চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছিলেন না আনন্দ। বন্ধুর চিতার সামনে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। সকলেই বুঝতে পারছিলেন তিনি শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন। এতে অস্বাভাবিকতার কিছু নেই। শ্মশান চত্বরে প্রিয় মানুষের হাহাকার কোনও নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু আনন্দ যা করেছেন তা একেবারের জন্যও কেউ কল্পনা করতে পারেননি।
আরও শুনুন: বোন মুসলিম ভাই হিন্দু, মায়ের শেষকৃত্যের রীতি নিয়েই বাধল জোর বিবাদ
তখন ঘড়িতে আন্দাজ ১১টা। অশোকের চিতা দাউ দাউ করে জ্বলছে। আর কিছুক্ষণের তা চিরতরে নিভে যাবে। সেইসঙ্গে মুছে যাবে তাঁর সমস্ত পার্থিব চীহ্ন। এমন সময় হঠাৎ সেই চিতার আগুনে ঝাঁপ দেন আনন্দ। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা সম্পূর্নভাবে গ্রাস করে নেয় তাঁর দেহ। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন সেখান থেকে আনন্দকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু জলন্ত চিতা থেকে কাউকে টেনে বার করা কি এতই সহজ! ফলত বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে। ততক্ষণে সব শেষ। আনন্দের দেহের অর্ধেরও বেশি অংশ ঝলসে গিয়েছে। তবু তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আনন্দের তখন কোনও হুঁশ নেই। দেখামাত্রই চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে দেন। দেহের অধিকাংশটাই পুড়ে গিয়েছে। তাই কোনোভাবেই আনন্দকে বাঁচানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। ঘটনায় রীতিমতো স্তম্ভিত সকলেই। বিশেষত মৃত অশোকের পরিবারের লোকজন। সকলেই মনে করছেন বন্ধুর মৃত্যুশোক মানতে না পেরেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন অশোক। তবে এর বাইরেও কোনও কারণ থাকতে পারে কি না, সে ব্যাপারে কারও ধারণা নেই। ঘটনার বিস্তারিত জানানো হয়েছে পুলিশকেও। তাঁদের তরফেই আনন্দের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।