ভোটের হাওয়া এখন জোরে বইছে দেশ জুড়ে। আর সে হাওয়ায় উড়ছে অজস্র প্লাস্টিকের ফ্লেক্স-ব্যানার-পতাকা। অতএব মুখ ঢেকে যায় নির্বাচনে, থুড়ি, বিজ্ঞাপনে। এসবের ভিড়ে পরিবেশ রক্ষার কথাটাও ধর্তব্যের মধ্যে আসে বইকি! আর তাই জোরালো হচ্ছে দু-একটা দাবি। কী সেগুলো? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
এ বলে আমায় দেখ। তো ও বলে আমায়। ভোটের দিনকাল ফ্লেক্সে-ব্যানারে ছয়লাপ। প্রিয় নেতানেত্রীর চেনা মুখ। চেনা চেনা প্রতিশ্রুতি জানান দিতে এরাই বড় ভরসা। এর মধ্যেই বড় চিন্তা পরিবেশ নিয়ে। কেননা ভোট ফুরলে দেখা যায় এইসব প্লাস্টিকের স্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদিকে সেদিকে। পরিবেশ দূষণে সে সবের জুড়ি মেলা ভার। আর তাই ভোটপ্রচারের এই চিরাচরিত মাধ্যম থেকে সরে গিয়ে বিকল্প সন্ধানের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
একসময় দেওয়াললিখন প্রচারে বড় ভূমিকা নিত। ছড়া, ছবিতে ভোটের মরশুম হয়ে উঠত সৃষ্টিশীল। এখনও তা আছে বটে; তবে, পুরনো অনেক কিছুর মতো এরও জনপ্রিয়তা কমেছে। প্লাস্টিকের ফ্লেক্স, ব্যানার, পতাকার বরং বেশিই চাহিদা। সব দলের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। কেননা এই ব্যানার বা ফ্লেক্স চোখে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ভোটের সময় তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে প্লাস্টিকজনিত দূষণ রোধে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। অপচনশীল প্লাস্টিক পরিবেশের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। পশুপাখিরা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে এই পাতলা প্লাস্টিকের দরুন। ১০০ মাইক্রনের নিচে যে সমস্ত প্লাস্টিক তা বন্ধেরই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাই। নির্বাচন কমিশনও এই ধরনের প্লাস্টিকদ্রব্য ব্যবহার না করে ভোট প্রচারের আর্জি জানিয়েছে। আর তাই জরুরি হয়ে উঠছে বিকল্পের সন্ধান। ভোটের মরশুমে যে জোরদার প্রচার জরুরি, তা অনস্বীকার্য। তবে তার মাধ্যম কী কী হতে পারে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।
বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া একটি শক্তিশালী মাধ্যম। প্রায় সব দলই তাদের প্রচারকে এই প্ল্যাটফর্মে টেনে এনেছে। পরিবেশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিও সচেতন। ফলত প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই প্রচার চালানোর পক্ষপাতী তারা। কোনও কোনও রাজনৈতিক দল তো ইতিমধ্যে এআই ব্যবহার করেও প্রচার শুরু করেছে। মাধ্যম যে অনেকটাই বদলাচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে, প্রচলিত মাধ্যমগুলো থেকে একেবারে যে সরে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, তা নয়। পরিবেশবিদদের মতে, ভোটের মরশুমেও প্লাস্টিক বর্জনের প্রক্রিয়া যত দ্রুত হয় ততই মঙ্গল। অন্য মাধ্যমে যদি একই বার্তা নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়, তাহলে অযথা পরিবেশকে ব্যতিব্যস্ত করে কোনও লাভ নেই। সহমত প্রায় সব দলের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা। চেনা অভ্যাসে বদল আনতে হয়তো আরও খানিকটা সময় লাগবে। তবে, প্রচারের বিকল্প সন্ধান যে দ্রুততায় এগোচ্ছে তাতে, ভোটের রাজনীতি হয়তো প্লাস্টিকমুক্ত হয়ে উঠবে অচিরেই।