মেয়েসন্তান। তাই তাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন বোধ করেনি তার নিজেরই পরিবার। জীবন্ত অবস্থাতেই পুঁতে ফেলা হয়েছিল তাকে, কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় সে। আর এখন তাকে পাওয়ার জন্যই রীতিমতো আইনি লড়াইয়ে নেমেছে দু-দুটি পরিবার। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কথায় বলে, রাখে হরি তো মারে কে! তেমনটাই বোধহয় ঘটেছে এই মেয়ের ক্ষেত্রে। কন্যা সন্তান অবাঞ্ছিত, তাই তাকে জন্মের পরই জ্যান্ত অবস্থাতেই সমাধি দিয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু, ভাগ্যের জোরেই বোধহয় উদ্ধার পেয়েছিল শিশুকন্যাটি। তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছিল একটি পরিবার। আর এখন, তাকে দত্তক নিতে বিদেশ থেকে এগিয়ে এসেছে আরও একটি পরিবার। বস্তুত এই দুই পরিবারের কারও সঙ্গেই ওই শিশুটির কোনোরকম রক্তের সম্পর্ক নেই। তবুও তাকে কাছছাড়া করতে নারাজ কেউই। তাই তাকে কেন্দ্র করেই রীতিমতো আইনি লড়াইতেও নেমে পড়েছে ওই দুই পরিবার। সম্পর্ক যে আসলে কেবল রক্তের সম্পর্কেই হয় না, মানুষে মানুষে বেঁধে থাকাই যে আসলে সম্পর্কের সংজ্ঞা, সে কথাই যেন আরও একবার বুঝিয়ে দিয়েছে এই ঘটনা।
কী ঘটেছিল ঠিক?
আরও শুনুন: ঋতুকালীন ছুটি হোক নারীর মৌলিক অধিকার, লক্ষ্যে অনেকটাই এগোল দেশ
রাজনৈতিক নেতারা যতই ‘বেটি বঁচাও’-এর স্লোগান দিন না কেন, আদতে গোটা দেশে যে তার প্রভাব এখনও পড়েনি, সে তো আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের সামগ্রিক ছবিটা দেখলে সেখানে জ্বলজ্বল করে ওঠে পুত্রসন্তান চাওয়ার ছবি। তাই শোনা যায় কন্যাভ্রূণ হত্যার একাধিক ঘটনার কথা, অথবা এই মেয়েটির মতোই কোনও কন্যাশিশুকে হত্যা করার ঘটনাও। উত্তরপ্রদেশের বরেলিতে জন্ম এই খুদের। তাকে জীবন্ত সমাধি দিয়ে ফেলে রেখে যায় তার পরিবার। ঘটনাচক্রে তাকে উদ্ধার করা গিয়েছিল। সেটা ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর। আর তারপর থেকেই তাকে বাড়িতে রেখে লালনপালন করে আসছেন এলাকার প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক রাজেশ মিশ্র ও তাঁর পরিবার। শিশুটিকে আইনি ভাবে দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদনও করেছেন বিধায়কের ভাইপো অমিত মিশ্র ও তাঁর স্ত্রী।
আরও শুনুন: হিন্দু এলাকায় মুসলিমকে দোকান বিক্রিতে আপত্তি, উলটে মামলাকারীকেই মোটা জরিমানা আদালতের
কিন্তু ভারতীয় আইন অনুযায়ী দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। আর সেই নিয়মের গেরোতেই এবার ওই খুদেকে হারাতে বসেছে ওই পরিবারটি। সম্প্রতি মাল্টার বাসিন্দা এক দম্পতির দত্তক নেওয়ার আবেদনে সম্মতি দেয় ইন্ডিয়ান নোডাল এজেন্সি ফর অ্যাডপশন। এই মেয়েটিকেই দত্তক হিসেবে পাবেন তাঁরা, কথা হয় এমনটাই। আর এই নির্দেশের বিরোধিতা করেই পালটা মামলা দায়ের করেছে ওই বিধায়কের পরিবার। তাঁদের আবেদনকে অন্যায়ভাবে এড়িয়ে গিয়ে ওই বিদেশি দম্পতির আরজিকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, এই মর্মে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। এমনকি দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় দম্পতির বদলে বিদেশি দম্পতিদেরই অগ্রাধিকার দেয় জাতীয় সংস্থা, এমনটাই অভিযোগ তাঁদের। এই কয়েক বছরে শিশুটির সঙ্গে তাঁরা মানসিক ভাবেও জড়িয়ে পড়েছেন। শিশুটিও তাঁদের সঙ্গে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। তাই মানবিক দৃষ্টিতেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছে ওই পরিবার।
যে শিশু তার নিজের পরিবারের কাছে অবাঞ্ছিত ছিল, তাকেই এখন আঁকড়ে ধরতে চাইছে আরও অনেক মানুষ। যা ফের বুঝিয়ে দিল, ভালবাসার আসলে কোনও গণ্ডি হয় না। মানবিকতার উপরে যেন নতুন করে ভরসা জাগাল এই ঘটনা।