পিরিয়ডস কোনও প্রতিবন্ধকতা নয়, এই যুক্তিতে মহিলাদের ঋতুকালীন ছুটির দাবি নাকচ করেছেন স্মৃতি ইরানি। কিন্তু পিরিয়ডস কি কারও ‘চয়েস’ বা নির্বাচন? এই প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পালটা দিলেন তেলেঙ্গানার বিআরএস নেত্রী। শুনে নেওয়া যাক।
কর্মরত মহিলারা পিরিয়ডসের সময় আলাদা করে ছুটি নিতে পারবেন কি না, এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলাপ আলোচনা চলছে। সম্প্রতি সেই বিষয়টিকে কার্যত নাকচ করে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, ঋতুকালীন ছুটি বরাদ্দ করার কোনও প্রয়োজন নেই। তাঁর মতে, পিরিয়ডস কোনও প্রতিবন্ধকতা নয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এহেন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নতুন করে উসকে উঠেছে বিতর্কের ঝড়। সেই ইস্যুতেই এবার স্মৃতিকে একহাত নিলেন তেলেঙ্গানার বিআরএস নেত্রী কে কবিতা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বিঁধে কবিতার সাফ প্রশ্ন, পিরিয়ডস কি কারও ‘চয়েস’ নাকি! এ তো প্রাকৃতিক সত্য। তাহলে প্রকৃতির সূত্রেই যে বেদনা সহ্য করতে হয় মেয়েদের, সেই যন্ত্রণাকে নাকচ করা হচ্ছে কীভাবে- প্রশ্ন নেত্রীর।
আরও শুনুন: জল পর্যন্ত নেই, মুঠো মুঠো ওষুধ খেয়ে পিরিয়ডস পিছোতে মরিয়া গাজার মহিলারা
পিরিয়ডস নিয়ে ট্যাবু অনেকখানি কাটলেও, এই সময়ে মহিলাদের ঠিক কী সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন, সে বিষয়টি এখনও কমই আলোচনায় আসে। আর আলোচনায় উঠলেও তা নিয়ে স্পষ্ট দিশা প্রায় নেই। অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের কথা যদি ছেড়েও দিই, প্রথাগত ভাবে কর্মরত মহিলাদের ক্ষেত্রেও ঋতুকালীন ছুটি নিয়ে এখনও ঐক্যমত্যে পৌঁছতে পারেনি কোনও সরকারই। ইদানীং কালে একাধিকবারই কেন্দ্রের কাছে ঋতুকালীন ছুটির প্রস্তাবটি উঠেছিল। সম্প্রতি ফের পিরিয়ডসের সমস্যাকে গুরুতর স্বাস্থ্যসমস্যা হিসাবে বিবেচনা করে ঋতুকালীন ছুটির অধিকার দাবি করে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল সংসদে। তার প্রেক্ষিতেই স্মৃতি ইরানি বলেন, যা মহিলাদের জীবনে একটি স্বাভাবিক ব্যাপার, তার জন্য বিশেষ ছুটি মঞ্জুর করার কথা আসছে না। উপরন্তু সংসদে এমন কোনও প্রস্তাব রাখা উচিত নয়, যেখানে মহিলাদের সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। মাসিক ছুটির ফলে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের প্রতি বৈষম্য হতে পারে বলে সকলকে সতর্ক করেন তিনি। পাশপাশি স্মৃতি এ কথাও বলেন, যাঁদের পিরিয়ডস হয় না, মাসিকের প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিকে এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়ার কোনও মানে নেই। বিজেপি সাংসদের এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেই এবার সরব হলেন তেলেঙ্গানার বিআরএস নেত্রী।
আরও শুনুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় AI ব্যবহার করে ছবি! ডিপ-ফেকের কবলে পড়বেন না তো?
কবিতার মতে, স্মৃতি যে বৈষম্যের কথা বলছেন, আদতে সেই বৈষম্য দূরে সরানোর জন্যই মেনস্ট্রুয়াল লিভের প্রয়োজন। কারণ সাম্যের অভ্যাস করতে চাইলে সমান জায়গা থেকে শুরু করতে হয়। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে বৈষম্য দেগে দেওয়া হয়, তা ঘুচিয়ে চলতে হলে নারীরও পুরুষের মতোই সমান সুযোগ সুবিধা পাওয়া উচিত বলে মনে করেন কবিতা। শারীরিকভাবে মহিলাদের যে এই দুর্বলতাটি রয়েছে, যা কেউ নিজেরা সাধ করে নির্বাচন করেননি, যা একান্তই প্রাকৃতিক, সেই অসুবিধার মোকাবিলা করা যেতে পারে ছুটির বাড়তি সুবিধেটুকু দিয়েই। কবিতা আরও বলেছেন, একজন মহিলা হিসেবে স্মৃতি ইরানির এই বিষয়টিকে নাকচ করা দেখে তিনি হতাশ। তবে এই অধিকার দাবি করার পথ থেকে যে তাঁরা সরে আসছেন না, সে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তেলেঙ্গানার নেত্রী।