সরকারি আধিকারিক হয়েও ঘুষ নিয়েছেন। আর সেই কাজ করতে গিয়েও ধরাও পড়েন ব্যক্তি। যথারীতি বরাদ্দ হয় কড়া শাস্তি। এমনকি ঘটনার জল গড়ায় আদালতেও। কিন্তু সেখানে ওই সরকারি আধিকারিককে বেকসুর খালাস করে দেন বিচারপতি। শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তির নামে হওয়া মামলাটাও খারিজ করে আদালত। কেন জানেন? আসুন শুনে নিই।
আমাদের দেশে, ঘুষ নেওয়া আইনত অপরাধ। বিশেষত কোনও সরকারি আধিকারিক যদি ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা পড়েন, তবে তাঁর জন্য কড়া শাস্তি বরাদ্দ থাকে। মোটা টাকা জরিমানা, কিংবা অনির্দিষ্টকালের জন্য হতে হয় সাসপেন্ড। কিন্তু এক্ষেত্রে সেসব কিছুই হয়নি। ঘুষ নিয়েছেন প্রমাণ হওয়া সত্ত্বেও এক সরকারি আধিকারিককে কার্যত নির্দোষ হিসেবে ঘোষণা করেছে বম্বে হাই কোর্ট।
আরও শুনুন: ভারত জোড়ো’র পোস্টার হাতে মক্কার সামনে ছবি! কংগ্রেস নেতাকে চাবুক, জেলের শাস্তি সৌদি আরবে
কথায় আছে, রাখে হরি মারে কে! এক্ষেত্রেও যেন ঠিক তেমনটাই হয়েছে পুনের এক মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে। ঘটনাটি ২০০৭-এর। সাধারণত সরকারি হাসপাতালে কারও চিকিৎসার জন্য কোনও টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই চিকিৎসকদের। কিন্তু কোনও একদিন এই মেডিক্যাল অফিসার তেমনটা করেননি। জনৈক রোগীর শুশ্রূষা বিনামূল্যে করে দিলেও, তাঁকে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট লিখে দেওয়ার জন্য ১০০ টাকা দাবি করেন ওই অফিসার। আর এতেই বেজায় আপত্তি জানান ওই রোগী। কিন্তু সেইসময় ওই টাকা তাঁকে দিতেই হয়। এরপরই আসল ঘটনার শুরু। ওই মেডিক্যাল অফিসারের নামে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে মহারাষ্ট্র পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা তদন্তও শুরু করে। ঘটনার জল গড়ায় আদালয় অবধি। কিন্তু সেখানে মামলাটি খারিজ করে দেন বিচারপতি। তাতে আরও জেদ চেপে যায় ওই রোগীর। সঠিক বিচার হয়নি দাবি করে তিনি সোজা বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্ত হন। সেখানে নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ফের মামলা করেন। এবার সেই মামলা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন হাই কোর্টের বিচারপতিও। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ২০০৭ সালে ১০০ টাকার খুবই কম ছিল। একইসঙ্গে বিচারপতি আরও বলেন, ২০২৩ সালে এসে যখন এই মামলার শুনানি হচ্ছে তখন সেই ১০০ টাকার মূল্য আরও কমেছে। বর্তমানে এই টাকায় কী ই বা এমন হয়! তাই এই মামলাকে বিচারযোগ্যই মনে করেননি তিনি। আদালত সাফ জানিয়েছে,মামলাকারী যে প্রমাণ পেশ করেছেন, তা দিয়ে অভিযুক্তকে কোনওভাবেই ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে দাগিয়ে দেওয়া যায় না। তাই ওই মেডিক্যাল অফিসারকে বেকসুর খালাস করেছে আদালত। এমনকি এই বিষয়টিকে তুচ্ছ বলেও কটাক্ষ করেছেন বিচারপতি। সবমিলিয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী, ঘুষ নিয়েও কোনও কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি সরকারি আধিকারিককে। তবে ১০০ টাকার জন্যও কেউ এইভাবে আদালতে ছোটাছুটি করেছেন দেখে বেজায় অবাক হয়েছে ওয়াকিবহাল মহল।