এক বছরেই নির্বাচনী প্রচারের খাতে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা খরচ করেছে বিজেপি। যা অন্য দলগুলির তুলনায় যথেষ্ট বেশি তো বটেই, এমনকি পদ্ম শিবিরের আগের বছরের খরচেরও প্রায় দ্বিগুণ। ব্যয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয়ও বেড়েছে কেন্দ্রের শাসকদলের। লোকসভা ভোটের আগে আয় ব্যয়ের নিরিখে অনায়াসেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসকে টেক্কা দিচ্ছে পদ্মশিবির। শুনে নেওয়া যাক।
চব্বিশের নির্বাচনে গদি দখলই পাখির চোখ। আর তার জন্য জোরদার প্রচারে ঝাঁপিয়েছে সব দলই। বস্তুত ভোট আসন্ন হতে নয়, আরও আগে থেকেই দেশজুড়ে নানাভাবে ভোটবার্তা দিয়ে চলেছেন নেতানেত্রীরা। বিশেষ করে বিজেপি যে তৃতীয়বার মসনদে ফেরার জন্য জমি তৈরির কাজ আগেই শুরু করে দিয়েছিল, সে কথা স্পষ্ট। দলের বার্ষিক আয়ব্যয়ের হিসেব সামনে আসতেই প্রকাশ্যে এসেছে বিজেপির সেই স্ট্র্যাটেজিও। ভোটের আগের বছরেই নির্বাচনী খাতে যে বিপুল পরিমাণ খরচ করেছে পদ্মশিবির, সেই হিসেব সাফ বুঝিয়ে দিচ্ছে বিপক্ষকে এক চুলও জমি ছাড়তে নারাজ মোদিরা। সে কারণেই ভোটের অনেক আগে থেকেই হিসেব কষে দেশজুড়ে প্রচারে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি। সেখানে খরচের হিসেবে কংগ্রেস-সহ সব বিরোধী দলকেই টেক্কা দিয়েছে তারা। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গেরুয়া শিবিরের আয়ও। সুতরাং নির্বাচনের আগের বছরে প্রচার অভিযানে আরও উপুড়হস্ত হয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল।
আরও শুনুন:
দক্ষিণে কি পদ্ম ফোটাতে পারবেন মোদি? কী বলছেন দেশের মানুষ?
চব্বিশের নির্বাচনের আগে সম্প্রতি সামনে এসেছে দলগুলির বাৎসরিক অডিট রিপোর্ট। আর সেখানেই দেখা যাচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে স্রেফ নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি খরচ করেছে এক হাজার ৯২ কোটি টাকারও বেশি। তাও এই হিসেবের মধ্যে বিজেপির প্রার্থীদের প্রচার খরচ ধরা নেই। তাঁরা আলাদা নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত অঙ্ক মেনে খরচ করেছেন। মনে করে নেওয়া ভালো, ওই এক বছরে উত্তর প্রদেশ, গোয়া, মণিপুর এবং পাঞ্জাবে বিধানসভার নির্বাচন হয়। সেখানে ওই একই আর্থিক বছরে কংগ্রেসের নির্বাচনী ব্যয় মোটামুটি এর পাঁচ ভাগের এক ভাগ, ১৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ নির্বাচনের আগে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের তুলনায় অনেক বেশি খরচ করতে পারছে বিজেপি। ২০২১-২২ আর্থিক বছরে তারা ভোটের জন্য ব্যয় করেছিল ৬৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু সেই খরচের তুলনায়, লোকসভার আগের বছরে নির্বাচনী ব্যয় একলাফে দ্বিগুণ করেছে বিজেপি।
বিজেপি জানিয়েছে, ওই কোটি কোটি টাকা খরচের মধ্যে ৪৩২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বিজ্ঞাপন বাবদ। ৭৮ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে নেতাদের যাতায়াতের জন্য কপ্টারের বিল মেটাতে। প্রায় ৭৫ কোটি টাকা দলের প্রার্থীদের এককালীন অনুদান হিসাবে দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক বৈঠক ডাকার জন্য ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা। বই-পত্রিকা কেনার খরচ প্রায় ৪৪ লক্ষের কাছাকাছি, যা আবার তার আগের বছরের তুলনায় অনেকটাই কম। কর্মীদের বেতনের খরচও আগের তুলনায় প্রায় এক কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪৬ কোটি টাকার কাছাকাছি।
আরও শুনুন:
হিন্দুদের দেওয়া ট্যাক্স ভিনধর্মের কাজে লাগবে কেন? বিজেপি নেতার বক্তব্যে শোরগোল
এদিকে নির্বাচন কমিশনকে জানানো রিপোর্টে বিজেপির দাবি, এর আগের বছরে তাদের আয় ছিল ১৯১৭ কোটি টাকার কাছাকাছি, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩৬১ কোটি টাকা। বিতর্কিত ইলেক্টোরাল বন্ড থেকেই বিজেপির আয় ১২৯৪ কোটি টাকা, যেখানে কংগ্রেসের বন্ড বাবদ আয় মাত্র ১৭১ কোটি টাকা। এই আয় কমার দরুন চাঁদা তোলার পথেও হেঁটেছে হাত শিবির। এমনকি ২০২১-২২ আর্থিক বছরে হাত শিবিরের রোজগার তৃণমূল কংগ্রেসের থেকেও কম হয়েছিল। অন্যদিকে বিজেপির দাবি, এখনও দলের আয়ের ৫৪ শতাংশ আসে দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের চাঁদা থেকে। অর্থাৎ জনসমর্থন এবং সেখান থেকে পাওয়া চাঁদার নিরিখেও যে শতাব্দীপ্রাচীন দলকে টেক্কা দিচ্ছে পদ্মশিবির, তেমনই ইঙ্গিত করছে দলগুলির বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসেব। আর এই বাড়তি আয় এবং অতিরিক্ত ব্যয় করার ক্ষমতা লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিকে বাড়তি সুবিধা দেবে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।