ভোটের আগে প্রচারে নেমেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবু কর্ণাটকে শেষরক্ষা হয়নি বিজেপির। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির রিপোর্টকার্ড নিয়ে এবার মুখ খুললেন রাজ ঠাকরে। তাঁর সাফ কথা, নিজেদের দোষেই হেরেছে পদ্ম শিবির। ঠিক কী বলেছেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিরোধীরা জেতে না, আসলে শাসক দল হারে- কোনও নির্বাচনে শাসক দলের পিছিয়ে পড়াকে এভাবেই দেখেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা ওরফে এমএনএস দলের সুপ্রিমো রাজ ঠাকরে। কর্ণাটক ভোটের ফলাফলের পর বিজেপিকেও এ কথা বলেই তোপ দাগলেন তিনি। তাঁর সাফ কথা, নিজেদের আচরণের জেরেই কর্ণাটকে ভরাডুবি ঘটেছে বিজেপির। আর সেই দুরবস্থার পালে আরও হাওয়া দিয়েছে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা। সব মিলিয়ে বিজেপির হারের পর গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে নতুন করে আক্রমণ শানিয়েছেন রাজ ঠাকরে। এমনিতে ভোটের ফলাফল সামনে আসতেই কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের দাবি ছিল, নিজেদের অস্ত্রেই ঘায়েল হয়েছে বিজেপি। আসলে নির্বাচনী ইস্তেহারে কংগ্রেস বজরং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কথা বলতেই পালটা বজরংবলীকেই হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে প্রতি জনসভাতেই বজরংবলীর নামে স্লোগান তুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তারপরেও বিজেপির পিছিয়ে পড়া দেখে বিরোধীদের খোঁচা ছিল, বজরংবলীর আশীর্বাদ মেলেনি বিজেপির। পদ্ম শিবিরের আচরণ নিয়ে এবার বিঁধলেন রাজ ঠাকরেও। বিজেপির নিজের হাতিয়ারই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরেছে, কার্যত এ কথাই বললেন তিনিও।
আরও শুনুন: দুধ থেকে সাপ সবই এল প্রচারে, কর্ণাটকের ভোটে তবু দেখাই মিলল না হিজাব বিতর্কের
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি এবং কংগ্রেস দুই দলের কাছেই ‘অ্যাসিড-টেস্ট’ ছিল কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচন। সেই লড়াইয়ে যথারীতি ধর্মীয় মেরুকরণের তাসকেই কাজে লাগিয়েছিল গেরুয়া শিবির। আর গত দুবছর ধরেই কর্ণাটকে একাধিকবার সেই রাজনীতির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব বিতর্ক, ওবিসি মুসলিমদের সংরক্ষণ বাতিল, ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ের শহিদ টিপু সুলতানকে নিয়ে বিতর্ক, এমন একাধিক ইস্যু তুলেছে বিজেপি। এমনকি, ভোটের প্রচারে এসেছে ‘হালাল মাংস’ এবং বিতর্কিত ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র প্রসঙ্গও। যদিও কর্ণাটকের গদিতে থাকা বোম্মাই সরকারের বেলাগাম দুর্নীতি নিয়ে লাগাতার অভিযোগের কোনও জবাবই দেয়নি বিজেপি নেতৃত্ব। বরং সরকারের কমিশন নেওয়া নিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জেরে রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজে এল না কোনও কিছুই। ভোটের ফল বেরোতে দেখা গেল, কংগ্রেসের দুর্নীতিমুক্ত কর্ণাটক গড়ার প্রতিশ্রুতিতেই বরং আস্থা রেখেছেন কর্ণাটকের সাধারণ মানুষ।
আরও শুনুন: বিজেপির সহায় হল না বজরংবলী, কর্ণাটকের ফল বেরোতেই মোক্ষম খোঁচা বিরোধীদের
বিজেপির এই হারকে ঔদ্ধত্যের পরাজয় হিসেবেই দেখছেন রাজ ঠাকরে। একইসঙ্গে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন জনতার এই নির্বাচনকে। তাঁর সাফ কথা, জনতাকে বোকা ভাবার কোনও কারণ নেই। আর আমাদের কেউ হারাতে পারবে না, ভোট আসবে আমাদের দিকেই- কোনও রাজনৈতিক দলের এহেন বিশ্বাস আঁকড়ে থাকারও যুক্তি নেই। বিজেপির এই পরাজয় থেকে বাকিদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত, কার্যত এমনটাই হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ ঠাকরে।