সংখ্যালঘুদের সুযোগ-সুবিধার দিকে বেশি করে নজর দেওয়া জরুরি। দলমত নির্বিশেষে প্রায় সব সরকারই এরকম মত পোষণ করে। তবে, বর্তমান মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সংখ্যালঘু বিদ্বেষের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু বাস্তব পরিসংখ্যানও কি একই কথা বলছে? সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের তথ্য দিয়েই সে প্রশ্নের উত্তর দিলেন এক বিজেপি নেতা। তা মোদির আমলে সংখ্যালঘুদের বিকাশের কোন তথ্য তুলে আনলেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সংখ্যালঘুদের প্রতি অবিচার করছে কেন্দ্র। এমন অভিযোগে প্রায় একযোগেই সরব হন বিরোধীরা। তাঁদের সব অভিযোগ যে অমূলক, তা নয়। তবে, এর পালটা হিসাবে একেবারে অন্য তথ্যও যে আছে, তাই-ই এবার স্পষ্ট করে দিলেন বিজেপি নেতা তথা গেরুয়া শিবিরের সংখ্যালঘু সেলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদিক সুফি এম কে চিস্তি। তাঁর দাবি, মোদির আমলেই সংখ্যালঘুরা সবথেকে বেশি সুবিধা পেয়েছেন।
আরও শুনুন: ‘সুবক্তা’ মোদির ম্যাজিকে হিন্দুদের থেকেও বেশি মুগ্ধ মুসলিমরা! ইঙ্গিত মিলল সমীক্ষায়
প্রায় ৯ বছরের মেয়াদে মোদি সরকারের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের রসায়নে অনেকটাই বদল এসেছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষাও সে ইঙ্গিত দিয়েছিল। বিজেপি মানেই যে সংখ্যালঘু বিদ্বেষী দল, এমন একরৈখিক বিরোধিতার বয়ানকে সন্দেহের মুখে দাঁড় করিয়েছিল এই সমীক্ষা। সিএসডিএস লোকনীতি-র বিশেষ এই সমীক্ষা জানিয়েছিল, ৪৪ শতাংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বী মনে করেন, অর্থনৈতিক অবস্থা মোটের উপর একই রকম আছে। নতুন নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে মোদির ভূমিকা নিয়েও সেখানে তারিফ করেছেন মুসলিমরা। এক্ষেত্রেও হিন্দুদের তুলনায় মুসলিমদের তরফে বেশি ভোট পেয়েছেন মোদি। যেখানে ১১ শতাংশ হিন্দু মোদির পক্ষে, সেখানে মুসলিমদের সমর্থন ১৪ শতাংশ। হিন্দুদের থেকেও বেশি শতাংশ মুসলিমরা মোদিকে সেরা বক্তা হিসেবে বেছেছেন। তাঁদের মতে মোদির মতো সুবক্তা সারা দেশে আর নেই। মোদির কথার জাদুতে যেমন মুগ্ধ ২৪ শতাংশ হিন্দু, তেমনই মুগ্ধ ২৯ শতাংশ মুসলিম। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মনের কথাই এখানে উঠে এসেছে। একই ইঙ্গিত করেছেন এই বিজেপি নেতাও। তাঁরও দাবি, মুসলিমরা তো বটেই, সামগ্রিক ভাবে সংখ্যালঘুরা সবথেকে বেশি উপকৃত হয়েছেন মোদির জমানাতেই। তথ্য দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ২০১৪ সালে সরকারি চাকুরে ছিলেন ৪.৫ শতাংশ। সেখানে বর্তমানে সেই হার বেড়ে হয়েছে ১০.৫ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘুরা যে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছেন, এমনটাই মত নেতার। পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সাধারণ মানুষের জন্য যে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প এনেছে মোদি সরকার, তার সুবিধা পেয়েছেন সংখ্যালঘুরা। উন্নয়নের নিরিখে অন্তত সরকার কোনও রকম ভাগাভাগিকে যে প্রশ্রয় দেয়নি, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: কেদারনাথ মন্দিরের সামনে প্রপোজ, জড়িয়ে ধরে ছবি পোস্ট যুগলের, নিন্দায় সরব নেটদুনিয়া
প্রশ্ন উঠতে পারে, হঠাৎ কেন সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন নিয়ে সরব বিজেপি নেতা? এর প্রেক্ষিতও আছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল নির্ধারণ করতে গিয়ে এই পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকেই পাখির চোখ করেছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রস্তুতির পথ ঠিক করতে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয়, দেশের পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, গরিব, মধ্যবিত্তদের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছবেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। তাঁরা জানাবেন যে, গত ৯ বছরে তাঁদের জন্য মোদি সরকার ঠিক কী কী করেছে। এ ছাড়া তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষার হদিশ পেতে হবে। যার ভিত্তিতে আগামীতে সরকার কী করবে তারও রূপরেখা ঠিক হবে, এবং সে-কথাও স্পষ্ট করে জানাতে হবে এই শ্রেণিকে। অর্থাৎ সংখ্যালঘু বা গরিববিদ্বেষি তকমা ঘোচাতে বিজেপি যে মরিয়া, তা এই রণনীতিতেই স্পষ্ট। আর এবার সেই একই সুরে সংখ্যালঘু উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন বিজেপি নেতা। অভিন্ন বিধি নিয়ে বিতর্কের আবহে, এই সংখ্যালঘু উন্নয়ন-বার্তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।