সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্যে ‘হত্যা’, ‘হিংসা’-র মতো শব্দ প্রয়োগ করা চলবে না। রাহুল গান্ধীকে বিঁধে দাবি করলেন বিজেপি মুখপাত্র। কী কারণে নির্দিষ্ট শব্দে আপত্তি তুলেছেন তিনি? শুনে নেওয়া যাক।
সংসদের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বিঁধতে গিয়ে কেন ‘হত্যা’ বা ‘হিংসা’-র মতো শব্দ প্রয়োগ করেছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী? জোরদার আপত্তি তুললেন বিজেপি মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী। এক প্রাক্তন আইপিএস-এর লেখা নিবন্ধের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি নেতার দাবি, রাজনৈতিক বক্তব্য অনেকসময় জনতার মনে যে প্রভাব ফেলে, তা শেষ পর্যন্ত হিংসায় উসকানি দেয়। আর সে বক্তব্যে এই জাতীয় শব্দ থাকলে তা হিংসার দিকেই ঠেলে দেবে, এমনটাই মত ওই নেতার। এমনকি এই প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-র হত্যা বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর সাম্প্রতিক হামলার কথাও তুলে এনেছেন তিনি। সব মিলিয়েই তাঁর ইঙ্গিত, বিরোধী দলনেতা যদি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ‘হত্যা’, ‘হিংসা’-র মতো শব্দ প্রয়োগ করেন, তবে তা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি হিংসাত্মক ঘটনা ঘটাতে উসকানি দিতে পারে। ২০০৭ সালে মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে যে তাঁকে ‘মওত কা সওদাগর’ বলে তোপ দেগেছিলেন সোনিয়া গান্ধী, এ প্রসঙ্গে সেই কথাও টেনে এনেছেন বিজেপি নেতা।
আরও শুনুন:
চোখা বক্তৃতায় বাজিমাত রাহুলের, তবুও কোন কোন অংশ বাদ গেল সংসদের খাতায়?
এমনিতে সংসদে কী কী শব্দ বলা যায় না, তার রীতিমতো তালিকা করে দিয়েছে সংসদীয় কমিটিই। যেসব শব্দ সংসদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করতে পারে, বা যে শব্দের প্রয়োগে কারও ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে, তাকেই অসংসদীয় শব্দ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেই হিসেবে সংসদের নিষিদ্ধ করা অসংসদীয় শব্দের তালিকায় ‘জুমলাবাজি’, ‘শকুনি’, ‘খালিস্তানি’, ‘অ্যাবিউজড’, ‘চিটেড, ‘ক্রিমিনাল’ সহ একাধিক শব্দ রয়েছে। ‘জুমলা’ শব্দে বারবার প্রধানমন্ত্রী মোদি সহ শাসক দল বিজেপিকে বিঁধে থাকে বিরোধী শিবির। তবে ২০২৩-এর বাদল অধিবেশনের আগেই সংসদে সেই শব্দ প্রয়োগে নিষেধাজ্ঞা টেনেছিল মোদি সরকার। এবারও বিরোধী দলনেতার মোদি-বিরোধী বক্তব্য থেকেই নির্দিষ্ট শব্দের প্রয়োগে আপত্তি জানালেন বিজেপি মুখপাত্র। তাঁর পরামর্শ, বিরোধী হিসেবে রাজনৈতিক মর্যাদা বজায় রেখেই শব্দপ্রয়োগে সতর্ক হওয়া উচিত।
আরও শুনুন:
ক্ষমতায় এলে এমনই থাকবেন, না বদলে যাবেন? ব্যাখ্যা দিলেন রাহুল
সত্যি বলতে অশালীন বা অসংসদীয় শব্দ প্রয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ বোধহয় বিজেপির বিরুদ্ধেই উঠেছে। কখনও মুসলিমদের প্রতি, কখনও নারীর প্রতি, কখনও ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন খোদ মোদি-শাহরাও। তাহলে ‘মার্ডার’ বা ‘ভায়োলেন্স’-এর মতো বহুলপ্রচলিত শব্দ নিয়ে বিজেপির হঠাৎ এহেন মাথাব্যথা কেন? আসলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের রাজনীতি যে দেশজুড়ে নানাভাবে হিংসা ছড়ায়, সংসদে তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। তুলে এনেছিলেন মণিপুরে চলতে থাকা হিংসার কথা। মোদি সরকারের নানা পদক্ষেপ যে দেশের সংবিধান এবং গণতন্ত্রকে হত্যা করছে, সে কথা ভোটপ্রচারেও বলেছেন তিনি, বলেছেন সংসদেও। বলাই বাহুল্য, এ জাতীয় সমালোচনা প্রধানমন্ত্রী মোদি কিংবা তাঁর দল, কারোরই শুনতে ভালো লাগার কথা নয়। তাই রাহুলের বক্তব্যে রাশ টেনে আসলে সংসদে মোদিবিরোধী আন্দোলনের ঝাঁঝ কমানোরই চেষ্টা করছে পদ্মশিবির, এমনটাই ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।