ফের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে সরগরম দেশ। তবে এবার অভিযোগের আঙুল উঠল খোদ বিজেপি শিবিরের দিকেই। হিন্দু দেবীর অসম্মান করেছেন এক বিজেপি বিধায়ক, এহেন অভিযোগে সরব হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। কী ঘটেছে ঠিক? শুনে নেওয়া যাক।
দেশজুড়ে পূজার্চনার আবহেই ধর্মীয় ইস্যুকে হাতিয়ার করে উসকে উঠল নয়া বিতর্ক। হিন্দু দেবী লক্ষ্মীকে নিয়ে ভক্তদের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করেছেন এক বিজেপি বিধায়ক, এই অভিযোগে সুর চড়াল হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। এমনকি ওই বিধায়কের কাশপুতুল পুড়িয়েও জানানো হল প্রতিবাদ। যদিও নিজের অবস্থানে অনড় ওই বিধায়ক। তাঁর মতে, কেবল বিশ্বাস নয়, দেবদেবীদের অস্তিত্বের বিষয়টি যুক্তি দিয়ে যাচাই করা উচিত।
আরও শুনুন: মক্কায় আছেন স্বয়ং মক্কেশর মহাদেব! পুরীর শঙ্করাচার্যের দাবিতে শুরু জোর চর্চা
ঠিক কী ঘটেছে?
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী দেবী লক্ষ্মী ঐশ্বর্যের দেবী। আবার বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী হলেন সরস্বতী। যাঁদের দেবী দুর্গার দুই সন্তান হিসেবেও কল্পনা করা হয়ে থাকে। ধনলাভের জন্য, বিদ্যার্জনের জন্য এই দুই বোনের শরণাপন্ন হন ভক্তরা। আর এই বিশ্বাস নিয়েই সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন বিহারের পীরপৈন্তি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক লালন পাসওয়ান। তাঁর মতে, “শুধু লক্ষ্মীপুজো করেই যদি বড়লোক হওয়া যেত, তবে কি মুসলিমদের মধ্যে এত এত লাখপতি, কোটিপতি পাওয়া যেত?” এমনকি সরস্বতী পুজো প্রসঙ্গেও তাঁর মত একইরকম। তাঁর প্রশ্ন, “সরস্বতী যদি বিদ্যার দেবী হন, তবে মুসলমানরা কী ভাবে তাঁর আরাধনা না করেই উচ্চশিক্ষিত হচ্ছেন? কী করে আইপিএস, আইএএস হচ্ছেন?” এমনিতে মাঝেমধ্যেই মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশে কটাক্ষ ছোড়েন গেরুয়া শিবিরের নেতাকর্মীরা। লালনের বক্তব্যেও খানিক সেই প্রবণতাই দেখা গিয়েছে। তবে তাঁর বক্তব্যের বাকি অংশ নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তাঁর নিজের শিবিরের লোকজনও। কারণ ওই নেতার সাফ কথা, “আপনি ঈশ্বরকে জীবন্ত সত্তা মনে করতে পারেন, আবার পাথরের মূর্তিও মনে করতে পারেন। সবটাই নির্ভর করছে আপনার বিশ্বাসের উপর।” সবকিছুকে বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি দিয়ে খতিয়ে দেখে তবেই কোনও সিদ্ধান্তে আসা উচিত বলেই মনে করেন ওই নেতা।
আরও শুনুন: মঙ্গলসূত্র খুলতে হবে, তবে আপত্তি নেই বোরখায়! নির্দেশ পরীক্ষাকেন্দ্রে, বিতর্ক তেলেঙ্গানায়
আর এই বক্তব্যের মাধ্যমেই তিনি হিন্দু ধর্মের ওই দুই দেবীকে অসম্মান করেছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষেরা। মুসলিমদের মধ্যে ধনী ব্যক্তিরা রয়েছেন, এ কথা মেনে নিলেও লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করে ঐশ্বর্যলাভের ব্যাপারে কোনোরকম সংশয়কে গুরুত্ব দিতে তাঁরা রাজি নন। ওই রাজনৈতিক নেতার এহেন মন্তব্যে রীতিমতো ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তাঁরা। এমনকি তাঁর কুশপুতুলও পোড়ানো হয়েছে। বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে সরব হয়েছে বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনও। তবে প্রতিবাদের পরেও নিজের বক্তব্যেই অনড় থাকছেন ওই বিজেপি বিধায়ক।