নতুন কিছু করলেই বানাতে হবে রিল। নাহলে সেই কাজ সম্পূর্ণ হবে না। সোশাল দুনিয়ার এই ট্রেন্ডে গা ভাসাচ্ছেন নতুন ভোটাররাও। নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ভোটদানের রিল। কিন্তু দেশের আইন এই কাজ মোটেও সমর্থন করে না। এমনকি হতে পারে জেলও। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
প্রথম ভোট। অবশ্যই রোমাঞ্চকর ব্যাপার। তাই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে হবে সকলের সঙ্গে। ইন্টারনেটের যুগে মুখের কথায় কী আর কাজ হয়! তাই প্রথম ভোটদান ক্যামেরাবন্দী করতেই ব্যস্ত নতুন প্রজন্মের ভোটাররা। কিন্তু আইন বলছে এমনটা করলে জেল পর্যন্ত হতে পারে নির্দিষ্ট ভোটারের।
আরও শুনুন: দিব্যি চলছে বউ-কেনা প্রথা, ‘কবে বন্ধ করবেন?’ খট্টরকে সপাট প্রশ্ন ভুক্তভোগী মহিলার
১৯৭৭-এর পর এটাই নাকি দেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য অনেকটা এরকমই। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার অনেক কারণই আছে। যার অন্যতম নতুন ভোটার। চলতি নির্বাচনেই প্রথমবার ভোট দিচ্ছেন দেশের প্রায় ১৯ লক্ষ তরুণ-তরুণী। রাজনীতির ময়দান সম্পর্কে যাঁদের বেশিরভাগই অনভিজ্ঞ। এমনকি ভোটদানের নিয়মকানুনও জানা নেই অনেকের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা অবশ্য মনে করছেন চলতি নির্বাচনের বেশ কিছু ‘এক্স’ ফ্যাক্টর নির্ভর করছে এই নতুন ভোটারদের উপর। ভোটারদের কথাতেও সেই ছাপ স্পষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সেইসঙ্গে আরও একটা ব্যাপার তৈরি করছেন এই নতুন ভোটাররাই। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তরুণ প্রজন্মের হাতে মোবাইল থাকা অস্বাভাবিক নয়। বলা ভালো, তাঁদের সোশাল দুনিয়ায় অবাধ বিচরনও একেবারেই স্বাভাবিক। সেই সুবাদে অনেকেই জীবনের ধ্যান জ্ঞান বানিয়ে ফেলেছেন রিল তৈরি করাকে। জীবনের যাবতীয় খুঁটিনাটি ৯০ সেকেন্ডে বেঁধে ফেলাই কাজ। সেই ভিডিও হাজার হাজার ভিউ পাবে। লাইকের বন্যায় ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টও ভরবে। তাই প্রতিনিয়ত বদলাতে থাকে ট্রেন্ড। বলিউড গানের সঙ্গে নির্দিষ্ট ছন্দে নাচ কিংবা কাউকে নকল করে ঠিক সেইভাবে ভিডিও বানানো রিল দুনিয়ার এইসব ট্রেন্ডে গা ভাসাতে ব্যস্ত থাকেন অনেকে। নির্বাচনের আবহে সেই তালিকায় যোগ হয়েছে ভোটদানের প্রক্রিয়াও। কীভাবে ভোট দেওয়া হচ্ছে সেই সবকিছু ক্যামেরা বন্দী করে সোশাল দুনিয়ায় রিল হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়া। কোনও গোপনীয়তা নেই। প্রকাশ্যে কোন দলকে ভোট দেওয়া হচ্ছে তা সকলে জানানোই, এই নতুন ট্রেন্ডের বৈশিষ্ট্য। আর সেখানেই সবথেকে বেশি শামিল হচ্ছেন দেশের নতুন ভোটাররা।
আরও শুনুন: কথায় বলে সাধু সাবধান! কোন সাধুদের সাবধানে থাকতে হয়, কেনই বা?
কিছুদিন আগে যোগীরাজ্যের ঘটনায় নেটদুনিয়ায় শোরগোল পড়ে যায়। ঘটনা বলতে একটা রিল। যেখানে এক যুবককে একই চিহ্নে পরপর আটবার ভোট দিতে দেখা যায়। সেই ঘটনা তিনি নিজেই ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন। তারপর রিল হিসেবে সোশাল দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেন। অনেকেই দাবি করেন, ওই ভিডিও এডিট করা। অর্থাৎ বাস্তবে এমনটা করা সম্ভব নয়। যদিও ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু এই একমাত্র ঘটনা নয়। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা বলছে, ভোটের আবহে এই ধরনের রিলের সংখ্যা বাড়ছে রীতিমতো। অনেকেই নিজের প্রথম ভোটের অভিজ্ঞতা ৯০ সেকেণ্ডের ভিডিও হিসেবে ভাগ করে নিচ্ছেন সকলের সঙ্গে। তাঁদের দাবি, এই ভিডিও বা রিল অন্যান্য নতুন ভোটারদের সাহায্য করবে। ঘরে বসেই সকলে বুঝে যাবেন ঠিক কীভাবে ভোট দিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ভোটদানের ভিডিও করাও কি আদৌ আইন সম্মত? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন একেবারেই নয়। নিয়ম বলছে বুথের ১০০ মিটারের মধ্যেই মোবাইল নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। কেউ যদি লুকিয়ে মোবাইল নিয়ে বুথে প্রবেশ করেন, তবে তা অবশ্যই আইনত অপরাধ। সেখানে ভোটদানের ভিডিও করা তো একেবারেই অনুচিত। এমনটা করতে গিয়ে ধরা পড়লে মোটা টাকা জরিমানা কিংবা তিন মাস অবধি জেল হতে পারে। শুধু তাই নয়, কাকে ভোট দেওয়া হচ্ছে সেও ভোটারের ব্যক্তিগত পছন্দ হিসেবেই রাখা উচিত। সেই গোপনীয়তা কেউ ভাঙতে চাইলে হতে পারে শাস্তি। কেড়ে নেওয়া হতে পারে ভোটাধিকার। যার ভবিষ্যতেও কোনওদিন ভোট না দিতে পারেন ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তি। কাজেই সাবধান না হলে বিপদ। সোশাল দুনিয়ার বাকি সব ট্রেন্ডের সঙ্গে এই ভোট রিলিং-কে এক করে ফেললে আইনের গেরোয় পড়তে বাধ্য।