অনলাইনে বিভিন্ন মানি অ্যাপের মাধ্যমে টাকা লেনদেন- আজকালকার দিনে আকছার ঘটনা। আমরা অনেকেই তাতে অভ্যস্ত। আর সেই অভ্যাসের সুযোগ নিয়েই জাল বিছোচ্ছে অপরাধীরা। কলকাতা পুলিশের তরফেও এ ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে বারবার। এখন, নিজের অজান্তেই আপনি সেই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন না তো! তা বুঝবেন কী করে? কীভাবে সতর্ক হবেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সদ্য সদ্য কোনও ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহার শুরু করেছেন! অ্যাপটি আপনাকে জানাচ্ছে, আপনার বন্ধু ও পরিচিতজনদের এই অ্যাপ ব্যবহার করতে বলুন, আর কিছু টাকা ওয়েলকাম গিফট দিন। এসবের মাঝেই হঠাৎ দেখলেন খুব পরিচিত কোনও বন্ধু আপনাকে ওই অ্যাপের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছে। হয়তো সামান্য কিছু টাকা, কিন্তু আপনি যদি সেটা নিতে চান তবে দিতে হবে UPI PIN। হয়তো মুহূর্তমাত্র চিন্তা না করেই দিয়ে ফেলবেন PIN। কারণ, প্রথমত এক্ষেত্রে আপনি টাকা পাচ্ছেন, টাকা দিতে হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, টাকাটা আসছে আপনার খুবই নিকটজনের থেকে। যেহেতু আপনি অয়াপের প্রমোশনে এই ধরনের জিনিস দেখেছেন, তাই আপনার কোনও সন্দেহই থাকল না এই নিয়ে। কিন্তু সাধু সাবধান! এটাই হতে পারে সাইবার অপরাধীদের ফাঁদ। অ্যাপটিকে ঢাল করেই অপরাধীরা এই জাল বিছিয়ে রাখে।
আরও শুনুন – ফেব্রুয়ারি মাসে কোথায় কবে বন্ধ থাকবে ব্যাঙ্ক? জেনে নিন
ফলত অনেক সময়ই দেখা যায় যে, UPI PIN দিয়ে, যেই ওই টাকা মানে আপনার অত্যন্ত প্রিয়জনের গিফট রিসিভ করতে যাবেন, অমনি আপনার মোবাইলে এসএমএস চলে আসবে যে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাপিস! অথবা সেটি সম্পূর্ণ ফাঁকা। এরকম ঘটনার ভুক্তভোগী অনেকেই। তাই গোড়াতেই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা ভাল।
প্রথমত জেনে রাখুন টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ডিজিটাল মানি অ্যাপেই, আপনার UPI PIN দিতে হয় না। যদি এরকম কোনও প্রস্তাব আসে, তার আগে অবশ্যই একটা কল করে নিন আপনার সেই পরিচিত মানুষটিকে, যার নামে করে আপনার কাছে টাকা পাঠানো হবে বলে জানানো হচ্ছে। মনে রাখবেন কল করেই জেনে নিতে হবে। হোয়াটসঅ্যাপ বা এসএমএসে নয়। কারণ আপনার খুব কাছের মানুষ কারা কারা, যাদের সঙ্গে আপনার মোটামুটি কিছু আর্থিক লেনদেন রয়েছে, সেসব খোঁজ নিয়েই অপরাধীরা এই ধরনের টোপ ফেলে। আর বিভিন্ন মেসেঞ্জার, ফেসবুকের মত সোশ্যাল অ্যাপগুলি থেকেও তারা তথ্য সগ্রহ করে।
আরও শুনুন – অডিও-ভিডিও ভাইরালের নেশায় মানুষ কি হারাচ্ছে চিন্তার ক্ষমতা! ভাবনায় বিশেষজ্ঞরা
আবার একেবারে অপরিচিত কেউ আপনাকে এই টোপ দিতে পারে। ধরুন আপনি অনলাইন বিজনেস করেন। আপনার কোনও সম্ভাব্য ক্রেতা সেগুলি দেখে পছন্দ করে খুব বড় একটা ফর্দ আপনাকে জানাল। আপনি বুকিংয়ের জন্য টোকেন চাইলেন। সে পুরো টাকাই আগেভাগে দিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু আপনার বিশ্বস্ত ডিজিটাল মানি অ্যাপটি সমস্যা করছে। ওই ব্যক্তি কিছুতেই টাকা পাঠাতে পারছেন না। টেকনিক্যাল সমস্যা, টাকার অঙ্কও বেশি। আপনি তাই ভাবলেন অন্য কোনও অ্যাপ থেকে যদি টাকাটা পাওয়া যায়। আপনার সম্ভাব্য ক্রেতার পাঠানো লিঙ্ক থেকে তাই আপনি চট-জলদি অন্য একটি অ্যাপ নামিয়ে, আপনার ডিটেলস সেট করে নিলেন। এরপরই স্ক্রিনে দেখলেন টাকা চলে এসেছে আর আপনার UPI PIN চাইছে। কী করবেন? এটাও হতে পারে ফাঁদ। সন্দেহ হলে অবশ্যই কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলে যোগাযোগ করুন।
আরও শুনুন – একসঙ্গে চার্জ দেওয়া সম্ভব ৫ হাজার ফোনে, দৈত্যাকার পাওয়ার ব্যাঙ্ক বানিয়ে ভাইরাল ইউটিউবার
সম্প্রতি মুম্বইয়ের এক গৃহবধূ প্রায় ১.৮ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন সাইবার অপরাধীদের খপ্পরে পড়ে। এক্ষেত্রে আবার ছকটি ছিল অন্য। অনলাইন রিটেল প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনা একটি জিনিস তিনি ফেরত দিতে চাইছিলেন। ঝোপ বুঝে কোপ মারে অপরাধীরা। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি স্ক্রিন শেয়ারিং অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলে, এবং তাঁর ব্যাংকিং ডিটেলস দিতে হয় সেখানে। এরপরই গায়েব হয়ে যায় টাকা। বোরিভ্যালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই গৃহবধূ। এই ঘটনা আপনার সঙ্গেও ঘটতে চলেছে, এরকম আঁচ পেলেই সতর্ক থাকুন।
সম্প্রতি কলকাতা পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়ায় সতর্ক করেছে এ ব্যাপারে। লটারিতে জেতা টাকা দেওয়ার নাম করে যদি কেউ ওটিপি চায়, তাহলেও সাবধান হতে হবে। এমনকী কেওয়াইসি-র নামে যদি কোনও লিংকে ক্লিক করতে বলা হয়, তবে সেটাও হতে পারে অপরাধীদের ফাঁদ। যে কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি যদি লেনদেনের জন্য রিমোট কন্ট্রোল অ্যাপ ডাউনলোডের প্রস্তাব দেয়, যার মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তি আপনার ফোনে ঢুকতে পারে, তাহলে অবশ্যই বুঝে যাবেন যে, এক্ষেত্রে আপনি ফাঁদে পা দিতে চলেছেন।
আজকের দিনে ডিজিটাল লেনদেন এড়িয়ে যাওয়া কারোর পক্ষেই হয়তো সম্ভব নয়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই আপনাকে চলতে হবে। তবে, সেই সঙ্গে সতর্কও থাকতে হবে। আপনার সতর্কতাই আপনার রক্ষাকবচ- এই কথাটি মাথায় রাখলেই রেহাই পাবেন এই ধরনের ঘটনা থেকে।