প্রেমের জন্য অনশন করা থেকে ধরনা দেওয়া, কী না কী করতে পারে মানুষ! আর এ তো নিছক কিছু টাকা দেওয়ার ব্যাপার। সে টাকা আদৌ নিজের নাকি অন্য কারও, প্রেমিকাকে খুশি করার সময় কি অত কিছু দেখার সময় থাকে! নাহ, সেসব ভাবেনও নি পেশায় ব্যাঙ্ক ম্যানেজার এই ব্যক্তি। কিন্তু তারপর কী হল? আসুন, শুনে নেওয়া যাক সে গল্প।
প্রিয়জনকে ভালবেসে উপহার দিতে কার না ইচ্ছে করে! আর প্রেমের জোয়ার এলে তো সর্বস্বান্ত হতেও দ্বিধা করেন না কেউ কেউ। ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়’- এ কথা কি কেবল কবিই বলেন? আসলে তো সেই সর্বনাশকে নিজে নিজেই সেধে আনেন অনেকে। যেমনটা করেছেন এই ব্যক্তি। পেশায় ব্যাঙ্ক ম্যানেজার তিনি। কাজের সূত্রে বিপুল পরিমাণ টাকা দুহাতে নাড়াচাড়া করতে হয় তাঁকে। কিন্তু মুশকিলটা হল, সেই টাকা যে আদৌ তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, সে কথা আর মনে রাখেননি ওই ব্যক্তি। তাই গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত রাখা অর্থ থেকেই মোটা অঙ্কের টাকা সরাসরি প্রেমিকার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। সে টাকার পরিমাণ? ৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা! অবশ্য শুধু অন্যের টাকা দিয়েই যে প্রেমিকাকে মুগ্ধ করতে চেয়েছেন ওই ব্যক্তি, এমনটাও বলা যাবে না। কারণ নিজের তরফ থেকেও সাড়ে বারো লক্ষ টাকা সেই প্রেমিকাকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। অথচ সেই প্রেমিকাকে আদৌ কোনও দিন চোখেই দেখেননি তিনি।
আরও শুনুন: প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠতা ‘অপরাধ’! ভালবাসার মাশুল দিয়ে বহুবার হেনস্তার শিকার যুগল
অবাক লাগছে তো? ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলা যাক।
কর্ণাটকে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের হনুমন্তনগর শাখার ম্যানেজার ছিলেন হরি শঙ্কর নামের ওই ব্যক্তি। সম্প্রতি বেঙ্গালুরু পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। ব্যাঙ্কের গচ্ছিত অর্থ থেকে কয়েক কোটি টাকা তছরুপ করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর নামে। তিনি একাই নন, তাঁর দুই সহকর্মী, অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার কৌশল্য জেরাই এবং ক্লার্ক মুনিরাজু-র দিকেও উঠেছে সন্দেহের তির। জানা গিয়েছে, মে মাসের ১৩ থেকে ১৯ তারিখের মধ্যেই ঘটেছে এই তছরুপ কাণ্ড। সম্প্রতি ওই ব্যাঙ্কে প্রায় দেড় কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট খুলে তার ভিত্তিতে ৭৫ লক্ষ টাকা ঋণের আবেদন করেছিলেন এক মহিলা। আর তাঁর পেশ করা নথিপত্র ব্যবহার করেই একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার হরি শঙ্কর। কর্ণাটকের দুটি অ্যাকাউন্ট এবং পশ্চিমবঙ্গের ২৮টি অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ১৩৬বার লেনদেনের মাধ্যমে এই টাকা তিনি সংগ্রহ করেন বলে জানা গিয়েছে। আর এই সব টাকাটাই তিনি নিজের প্রেমিকার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। তাঁর কথায়, একটি ডেটিং অ্যাপের সূত্রে সেই মেয়েটির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। কোনও দিন মুখোমুখি দেখাও হয়নি দুজনের। কেবল ফোনে কথার সূত্রেই জমে ওঠে প্রেম। আর সেই ভারচুয়াল প্রেমিকাকে সন্তুষ্ট করার তাগিদ থেকেই এত টাকা তাকে পাঠিয়েছেন বলে জানান ওই ব্যক্তি।
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
যদিও পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর ওই ব্যক্তি দাবি করেছেন, আসলে তিনিই ফাঁদে পড়েছিলেন। প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে তাঁর থেকে টাকা লুঠ করেছে সাইবার ক্রিমিনালরা, এমনটাই দাবি করেছেন তিনি। তবে একজন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার হওয়ার সূত্রে এ জাতীয় জালিয়াতি বিষয়ে তাঁর সম্যক জ্ঞান থাকারই কথা। আর সেই কারণেই তাঁর এই দাবি আদৌ সত্যি কি না, সে কথাই এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ।