নিজে হিন্দু, কিন্তু বান্ধবী মুসলিম। আপাতদৃষ্টিতে ভিনধর্মে বন্ধুত্বই হয়ে দাঁড়াল অপরাধ। শাস্তি হিসেবে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হল যুবককে। নেপথ্যে সেই নীতিপুলিশের দল। ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে গণ্ডি টানার প্রবণতা ফের সামনে এল এই ঘটনায়। কোথায় ঘটেছে এই কাণ্ড? শুনে নেওয়া যাক।
বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। রাস্তায় হঠাৎ তাঁদের ঘিরে ধরে জনাতিরিশ যুবক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই যুবককে রাস্তায় ফেলে মারতে শুরু করে তারা। বেশ কিছুক্ষণ সেই তাণ্ডব চলে। তবে এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ডাকাতি বা ছিনতাই নয়। স্রেফ শাস্তি দেওয়া।
আরও শুনুন: অন্য কেরালা স্টোরি! দক্ষিণী রাজ্যের মন্দির চত্বরে নিষিদ্ধ RSS-এর মহড়া
কিন্তু কী এমন করেছেন ওই যুবক? তাহলে খুলেই বলা যাক।
ঘটনাটি কর্ণাটকের। বিগত কয়েকদিন ধরে একাধিক ইস্যুতে খবরের শিরোনাম দখল করছে এই রাজ্য। হিজাব বিতর্ক থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় ইস্যুতে বারেবারেই সরব হয়ে উঠেছে সে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। তবে ধর্মীয় ইস্যুতে নীতি পুলিশি যাতে না চলে, সে বিষয়ে সম্প্রতিই কড়া হুঁশিয়ারি শুনিয়েছিলেন নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। কিন্তু তারপরেও সেই নীতিপুলিশদের হাতেই হেনস্তা হতে হল ওই যুবককে। জানা গিয়েছে, ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে ‘বজরং দল’। আসলে ওই নিগৃহীত যুবক অজিত, বজরং দলের সদস্য। কট্টর হিন্দুত্ববাদ প্রচার করার মন্ত্রেই তিনি দীক্ষিত। এক্ষেত্রে ভিন ধর্মের কারও সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের সম্পর্ক না হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে অজিত তেমনটা করেননি। এক মুসলিম মহিলার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছিলেন তিনি। প্রায়শই মহিলার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। যা একেবারেই পছন্দ ছিল না বজরং দলের অন্যান্য সদস্যদের। ঘটনার দিন অজিত তাঁর মুসলিম বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে ছিলেন। সেখানেই নীতিপুলিশের দল ঘিরে ধরে তাঁকে। একেবারে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। যার জেরে গুরুতর আহত হন তিনি। ঘটনায় রীতিমতো ভয় পেয়ে যান ওই মুসলিম বান্ধবীও। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় হাজির হন তিনি। সবিস্তারে ঘটনার বিবরণ দেন পুলিশকে। তাঁরাই আহত অবস্থায় অজিতকে উদ্ধার করেন। তাঁকে ভরতি করা হয় হাসপাতালে। আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন অজিত। এদিকে তাঁর বান্ধবীর আনা অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ৩০জনের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।
আরও শুনুন: সাড়ে চার লক্ষ টাকায় ৭ বছরের মেয়েকে ‘বিক্রি’, ‘স্ত্রী’ হিসেবে ঘরে তুললেন বছর ৩৮এর ‘মালিক’
বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘বজরং দল’ ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কর্ণাটকের রাজ্য রাজনীতি। মুসলিমদের প্রতি কট্টর মনোভাবের কারণে বারে বারেই বিতর্কে জড়িয়েছে এই সংগঠনটি। এহেন হেনস্তার ঘটনা এবারই যে প্রথম ঘটল, তাও তো নয়। কিছুদিন আগেই এমনই একদল নীতিপুলিশের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন দুই ভিনধর্মের পড়ুয়া। অপরাধ বলতে, একসঙ্গে খাবার ভাগ করে খেয়েছিলেন ওই দুজন। তবে ওই ঘটনায় ইতিমধ্যেই দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে নির্বাচনের আগেই বজরং দলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিল কংগ্রেস। কর্ণাটকে গদি দখলের পরও এই নীতিপুলিশি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করার উদ্যোগ নিয়েছে সিদ্দারামাইয়া সরকার। কিন্তু কোথায় কী! বজরং দলের দৌলতে কর্ণাটকের বুকে আবারও প্রকাশ্যে এল এক নীতিপুলিশির ঘটনা।