রাত দখল করুক মেয়েরা। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ দেশজুড়ে এই দাবি উঠেছে। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি পথে নেমেছেন মহিলারা। তবে রাত দখলের এই মিছিলেও ধরা পড়ল জাত ভেদের নজির। মুম্বইয়ের ঘটনায় প্রশ্নে দেশের মানসিকতা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
স্বাধীনতার ৭৮ বছর কেটেছে। কিন্তু দেশের মানসিকতা বদলেছে কি? এক নয়, একাধিক ঘটনার প্রসঙ্গে এই প্রশ্ন ওঠে। সম্প্রতি মুম্বইয়ের ঘটনায় নতুন করে মাথাচাড়া দিল বিতর্ক। দেশজুড়ে মহিলাদের রাত দখলের যে মিছিল চলছে, তাতে সামিল হওয়ার সুযোগ পাননি স্থানীয় বস্তির মহিলারা। স্রেফ জাতের দোহাই দিয়েই তাঁদের দূরে থাকতে বলা হয়।
এই মূহুর্তে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তাল গোটা দেশ। দাবি একটাই, প্রকৃত দোষীর শাস্তি চাই। পথে নামছেন মহিলারা। যে রাত একের পর এক অপরাধের সাক্ষী থাকে, সেই রাত দখলের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। ‘রিক্লেইম দ্য নাইটস’এ সামিল হচ্ছেন গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। তবে সেই মিছিলেই ধরা পড়ল জাত ভেদের ছবি। ঘটনাটি মুম্বইয়ের। দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতো এখানকার মহিলারাও রাত দখলের ডাক দিয়েছিলেন। তাতে সামিল হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু প্রতিবাদে পা মেলানোর সুযোগ পাননি স্থানীয় বস্তি এলাকার মহিলারা। মুম্বইয়ের হিরানন্দিনি আবাসনের তরফে রাত দখলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যে কেউ মিছিলে অংশ নিতে পারে। আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি কোনও নিয়ম। স্বাভাবিক ভাবেই সে খবর পেয়েছিলেন স্থানীয় বস্তি এলাকার মানুষজন। বিশেষ করে সেখানকার মহিলারা। তাঁরাও ঠিক করেন প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেবেন। এমনিতে সমাজের এই স্তরে থাকার অপরাধে তাঁদের উপর কম অত্যাচার হয় না। এমনকি যৌন নির্যাতনও মুখ বুঝে সহ্য করতে হয় বলে দাবি মহিলাদের। কাজেই নিজেদের অধিকার অর্জনের এই লড়াইয়ে সামিল হতে চেয়েছিলেন তাঁরা। তবে আবাসনের তরফে তা হতে দেওয়া হয়নি।
সেদিন মিছিল শুরু হলে বস্তি এলাকার মহিলারাও জড়ো হন। তখনই আবাসনের মহিলারা বলেন, এই মিছিল তাঁদের জন্য নয়। এতে অংশ নেবেন স্রেফ আবাসনের মহিলারাই। সহজে এই নিষেধ মেনে নেননি বস্তি এলাকার মহিলারাও। নিজেদের দাবি নিয়ে মিছিলে সামিল হতে চান বলেই জানান সকলে। কথা কাটাকাটি শুরু হয়। অভিযোগ, এই সময় আবাসনের কিছু মহিলা এঁদের গায়ে হাত দেন। ছিঁড়ে দেওয়া হয় প্ল্যাকার্ডও। এমনকি এই ঘটনায় বস্তিবাসীকেই কাঠগড়ায় তোলেন আবাসনের বাসিন্দারা। আসলে, ওই বস্তি এলাকার অধিকাংশই দলিত। অর্থনৈতিক দিক দিয়েও তাঁরা অনেকটাই নিচু তলার মানুষ। তাই তাঁদের না আছে নিজের কথা বলার অধিকার, না আছে প্রতিরোধ করার অনুমতি। উচ্চবিত্ত আবাসনবাসীর দাবি অন্তত তেমনটাই। আর সেই দাবি কার্যত মেনে নিতে হল বস্তি এলাকার মহিলাদেরও।