রামের অযোধ্যায় যেন প্রাচীন ভারতবর্ষের এক যোদ্ধা হয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন অওধেশ প্রসাদ। যে প্রাচীন দেশে আর্য রাজপুত্রের সঙ্গে বানর-পাখি-রাক্ষসের মতো অনার্যের বন্ধুত্ব হতে পারত। বিভাজনের রাজনীতির মাঝে সেই রামরাজ্যের সমদৃষ্টি যেন ফিরল এই নেতার জয়ে।
রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিনে রাম মন্দিরে যাওয়া হয়নি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর। দলিত বলেই কি রামের মন্দিরে ঠাঁই হয়নি তাঁর, উঠেছিল সে প্রশ্ন। সেই রামের অযোধ্যাতেই এবার ভোটে জিতলেন সেই দলিত শ্রেণিরই একজন মানুষ। আর তাঁর হাত ধরেই বোধহয় আরও একবার জিতে গেল ভারতবর্ষ। যে ভারতবর্ষে গুহকের সঙ্গে রামের বন্ধুত্বের মাঝে জাতপাত বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। যে দেশের গণতন্ত্রে এখনও লেখা আছে সাম্য আর মৈত্রীর বাণী। সে দেশের মাঝখানে যে জাতপাতের কাঁটাতার এখনও মাথা তুলতে বাধা পায়, সে কথাই মনে করিয়ে দিল এই জয়। রামের অযোধ্যায় সেই প্রাচীন ভারতবর্ষের যোদ্ধা হয়েই যেন এসে দাঁড়ালেন অওধেশ প্রসাদ।
আরও শুনুন:
জোট বাঁধলে হতে পারে কার্যসিদ্ধি, বুঝিয়েছিল রামায়ণ-মহাভারতই
কে এই মানুষটি? লোকসভায় উত্তরপ্রদেশের অসংরক্ষিত এলাকা থেকে দলিত হিসেবে জয় পেয়েছেন একমাত্র তিনিই। সেই উত্তরপ্রদেশ, যা মোদি-যোগীর শক্ত ঘাঁটি বলেই পরিচিত। মায়াবতীর আন্দোলনের পরেও যে রাজ্যের একটা বড় অংশের মানুষ দলিতদের পায়ের নিচে রাখতে চান। আর সেই মনোভাবেই দিনের পর দিন আরও হাওয়া দিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। সেখানে কখনও উচ্চবর্ণের কল থেকে জল খাওয়ার অপরাধে শাস্তি হয় দলিতের, কখনও মন্দিরের কাছে যাওয়ার অপরাধে বেধড়ক মার খেতে হয়, কখনও দলিতের মুখে মূত্রত্যাগের খবর সামনে আসে, কখনও কোনও ছুতোয় কেড়ে নেওয়া হয় ভিটেমাটি। তথাকথিত নিচু জাতের মানুষের প্রতি এই বৈষম্যের নজর তো ছিলই, আর রাম মন্দির পর্বে বিভাজন-মন্তব্যের জোয়ার সেই বৈষম্যকে আরও দৃঢ় ভিত্তি দিচ্ছিল। অথচ সেই উত্তরপ্রদেশে, বলা ভালো সেই রাম মন্দিরের অযোধ্যাতেই, জনসমর্থন পাবেন কোনও দলিত মানুষ, এমনটা ভাবাই যেন কষ্টকল্পনা। অথচ তেমনটাই সত্যি করে ফেলেছেন অওধেশ, বা বলা যায় তাঁর উপর নির্ভর করেই এ কল্পনাকে সত্যি করে দিয়েছেন অযোধ্যার মানুষ।
আরও শুনুন:
রামের দোকান আগলান খায়রুল, এক ঠোঙায় খান মুড়ি, বাংলা আজও ভালোবাসার বারান্দা
সপা-র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অন্যতম অওধেশ অবশ্য এই প্রথমবার জিতছেন না। ৯ বারের বিধায়ক তিনি। জরুরি অবস্থার সময়ে হাজতবাসও করতে হয়েছে এই নেতাকে। এবারের প্রেস্টিজ ফাইটে বিজেপির থেকে আসন ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। বিজেপির দুবারের সাংসদ লাল্লু সিংকে ৫৪ হাজার ৫৬৭ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন অওধেশ প্রসাদ। জিতে নিয়েছেন সংসদে যাওয়ার ছাড়পত্র। যে সংসদে জনগণ-মনের প্রকাশ হওয়ারই কথা ছিল। সাম্প্রতিক কালের বিভাজনের রাজনীতিকে হারিয়ে সেই সাংবিধানিক অধিকারই জিতে নিলেন অওধেশ প্রসাদ।