কৃষির সঙ্গেই তাঁরা যুক্ত। তাঁদের দিন কেটে যায় চাষ-আবাদে। তবু কৃষকদের তালিকাভুক্ত তাঁরা সেভাবে হন না। হ্যাঁ, দেশের কৃষিক্ষেত্রে যে মহিলারা কাজ করেন, তাঁদের কথা অনালোচিতই থেকে যায় কৃষকদের প্রসঙ্গে। তবু যখন কৃষকরা আন্দোলন করেন, তাঁরাও কিন্তু শামিল হন। আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেই প্রতিবাদী মহিলাদের কথা।
কৃষক আন্দোলন খবরের শিরোনামে বেশ কিছুদিন ধরেই। ন্যায্য এবং ন্যূনতম দাবি আদায়ের জন্য ফের পথে নেমেছেন অন্নদাতার। তাঁদের সেই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন মহিলারাও। কিন্তু আমরা কি তাঁদের সেভাবে কৃষক বলে গণ্য করি? অক্সফাম ইন্ডিয়া-র রিপোর্ট বলছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অন্তত ৮৫ শতাংশ মহিলাই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশের নিজেদের নামে জমিজমা আছে। তবে তাই বলে ফসলের ঘ্রাণ থেকে তাঁরা যে দূরে থাকেন, তা তো নয়। অথচ সেই অর্থে কৃষকের অভিধা কিন্তু পান না এই রমণীরা।
গতবারের কৃষক আন্দোলনের সময় একেবারে সামনের সারিতেই ছিলেন এই মহিলারা। জমি না বাঁচলে, সর্বনাশা আইনের গেরো থেকে কৃষি না বাঁচলে, বিপদ সকলেরই। সে-কথা তাঁদের থেকে ভাল করে আর কে জানতেন! অতএব পথে নেমেছিলেন তাঁরা। রাজপথ দেখেছে সেই রমণীরা তাঁদের দাবির নিশান উড়িয়ে দিয়েছেন শাসকের সামনে। এবারের আন্দোলনের দাবিদাওয়া আলাদা। তবে, মূল প্রসঙ্গটি সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ন্যূনতম কিছু দাবি না মেটার ক্ষোভ থেকেই ফের দানা বেঁধেছে আন্দোলন। জায়গায় জায়গায় তা নিয়ে বিক্ষোভও হচ্ছে। দফায় দফায় হয়েছে আলোচনা। তবু রফাসূত্র সেভাবে মেলেনি। এবারের এই আন্দোলনেও শামিল হয়েছেন মহিলারা। তবে, সংখ্যায় আগেরবারের থেকে কম। সেদিকে নজর গিয়েছে অনেক বিশ্লেষকেরই। তবে কি এবারে দাবি-দাওয়ার সঙ্গে সহমত নন মহিলারা? বাস্তব বলছে, তা নয়। এই ধরনের আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে চলে। পথেই কাটাতে হয় কৃষকদের। একই ভাবে দিন-রাত গুজরান হয় মহিলাদেরও। তবে, একজন পুরুষের পক্ষে এভাবে দিনের পর দিন রাস্তায় কাটানো যতটা সহজ, একজন মহিলার পক্ষে তা হয়ে ওঠে না। জনৈক প্রতিবাদী মহিলা তাই বলছেন, পুরুষরা তো যে কোনও জায়গায় স্নানও করে ফেলতেন। কিন্তু মহিলারা তা পারেন না। ফলত, এই রকমের দীর্ঘ আন্দোলনের ক্ষেত্রে মহিলারা যে অংশ নেন, তা অনেক অসুবিধা মাথায় রেখেই।
তবু প্রশ্ন যখন দেশের এবং দশের, তখন অসুবিধা সত্ত্বেও আন্দোলনে নামতে পিছপা হননি তাঁরা। এবারের প্রতিবাদেও তাই এগিয়ে এসেছেন কৃষকরমণীরা। কেউ সামনে থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, কেউবা নেপথ্যে থেকে পথের সাথিদের সমর্থন জোগাচ্ছেন। শম্ভু সীমান্তের সামনে হয়তো কয়েকজনকেই দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার সীমান্ত থেকে ৩ কিমি সূরে একটি গুরুদ্বারে লঙ্গর সামলাচ্ছেন। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শুরু হয়ে যায় তাঁদের দিন। তারপর টানা ১০-১২ ঘণ্টার কাজ। প্রতিবাদে শামিল কৃষকদের কেউ যাতে অভুক্ত না থাকেন, সেদিকে কড়া নজর তাঁদের। আর তাই পরিবারকে একপাশে সরিয়ে রেখেই আন্দোলনের জ্বালানি জোগান দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, সকলেই তো আপনার জন। নিজেদের জন্য যে লড়াই, তাতে যে যেভাবে পারছেন, সেভাবেই অবদান রাখছেন। কেউবা সামনে থেকে, কেউ নেপথ্যে।
সত্যি বলতে, দেশের কৃষিক্ষেত্রের অন্যতম চালিকাশক্তি এই মহিলারাই। না তাঁদের জোটে মজুরি, না আছে নিজেদের জমিজমা। তবু, তাঁরাও আমাদের অন্নদাতাই। কৃষক বলে তাঁদের গণ্য কেউ না করলেও, কৃষিক্ষেত্র এবং কৃষক আন্দোলন- দুই তাঁরা আগলে রেখেছেন পরম মমতায়।