ভারত-পাক অশান্তির আবহে লাগামছাড়া হবে জিনিসের দাম। এমনই আশঙ্কা অনেকের। চর্চায় বুঁদ নেটদুনিয়া। তবে সত্যিই কি ভারত-পাক অশান্তির আবহে দাম বাড়বে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের? কী বলছে কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রক? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়! স্রেফ কথার কথা নয়, বিষয়টা আক্ষরিক ভাবেই সত্যি। তবে প্রাণ যাওয়া রূপক অর্থে ধরে নেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ দেহে প্রাণ থাকলেও, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকা দায় হয় অনেকেরই। সেক্ষেত্রে সবথেকে বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায় মূল্যবৃদ্ধি।
ইতিহাস সাক্ষী আছে, যুদ্ধ হলে জিনিসপত্রের দাম নাগালছাড়া হয় অল্পদিনেই। বাজার করতে নাভিশ্বাস ওঠে মধ্যবিত্তের। এমনকি যুদ্ধ হবে হবে, এই পরিস্থিতিতেও জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান অশান্তির আবহেও সেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সোশাল মিডিয়ায় এই নিয়ে বিস্তর চর্চায় চলছে। বলা হচ্ছে, যুদ্ধের জন্য যে বিপুল খরচ হবে তা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে উসুল করবে কেন্দ্র। ভিত্তিহীন দাবি বলাই যায়, তবে সোশাল মিডিয়ায় এমন কতশত দাবি হামেশাই উঠছে তার হিসাব রাখা কঠিন। কেউ কেউ আবার অঙ্ক কষে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কোন জিনিসের দাম সবার আগে বাড়তে পারে। আবার অনেকে এই দাবিও তুলেছেন, পুরোটাই সাজানো নাটক, অশান্তির আসল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র জিনিসের দাম বাড়ানো। এও ভিত্তিহীন দাবি, বলাই বাহুল্য। তবে মোটের উপর জিনিস দাম বাড়বে এমনটা একপ্রকার নিশ্চিতভাবে ধরে নিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ বিষয়টাকে গর্বের মতোও ভাবছেন। ফলাহ করে বলছেন, দেশের জন্য নাহয় এইটুকু করলাম! তবে আসল প্রশ্ন অন্য জায়গায়, সত্যিই কি জিনিসের দাম বাড়বে?
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক এমন কোনও ইঙ্গিত দিচ্ছে না। বরং অশান্তির আবহকে ছুতো করে কোনও অসাধু ব্যবসায়ী যেন মুনাফা লাভের চেষ্টা না করে, সেদিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। এমনিতে বিভিন্ন কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েই থাকে। এর সঙ্গে যুদ্ধ বা অশান্তিকে জুড়তে চাইছে না অর্থ মন্ত্রক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে কেন্দ্র। যে কারণে বাজারে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি হয়, সেদিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় সোশাল মিডিয়ায় এই সংক্রান্তম গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যাচাই না করে সেসব বিশ্বাস করে নেন অনেকে। এমন ঘটনাও এড়াতে চাইছে কেন্দ্র। রাজ্য সরকারের কাছেও এই নিয়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি হলে সকলের সমস্যা। তাই যে কোনওভাবেই তা আটাকাতে চাইছে কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রক।
মূলত জ্বালানির দাম বাড়লে সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধি হয়। তাই সবার আগে নজর রাখা হচ্ছে পেট্রোল বা গ্যাসের দামে। ইন্ডিয়ান ওয়েল বা ভারত পেট্রোলিয়ামের মতো সংস্থা আশ্বস্ত করেছে, এই মুহূর্তে দেশে যথেষ্ট জ্বালানি তেল মজুত রয়েছে। তাই সাধারণ জনগনের প্রতি তাদের বার্তা, কারও প্ররোচনায় পা দিয়ে আগেভাগে অতিরিক্ত তেল সঞ্চয় করার দরকার নেই। এমনিতে মূল্যবৃদ্ধির একটা বড় কারণ এই অতিরিক্ত সঞ্চয়। করোনার সময় বিষয়টা ভালমতো লক্ষ করা গিয়েছিল। কেউ খেতে না পেয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছে, কারও বাড়িতে থাকা অতিরিক্ত খাবার ফেলে দিতে হয়েছে। সবটাই প্ররোচনায় পা দেওয়ার ফল। ভারত-পাক অশান্তির আবহেও সোশাল মিডিয়ায় এমন অনেক প্ররোচনামূলক উপদেশবার্তা ঘুরছে। সেখানে রীতিমতো আদেশের সুরে বলা হয়েছে, অবিলম্বে অতিরিক্ত জ্বালানি বা কাঁচা সবজি মজুত রাখার কথা। তবে সবটাই যে ভুয়ো, একটু খোঁজ নিলেই বোঝা যাবে। কেন্দ্রের তরফে যতক্ষণ না এই ধরনের কোনও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, অযথা ঘাবড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই। এই বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করলে বাজার স্বাভাবিক থাকবে। অর্থমন্ত্রক একইসঙ্গে খেয়াল রাখছে, বাজারে কাঁচা মালের যোগান যেন সঠিক থাকে। অনেকসময় মধ্যস্থতাকারী অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা লাভের উদ্দেশে, বাজারে কৃত্রিম চাহিদা সংকট তৈরি করেন। সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের কারণ দেখিয়ে বোকা বানানো হয়। সেসব এড়াতেই বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্র। সুতরাং অশান্তির আবহে, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যতই চর্চা হোক, এখনও সেই পরিস্থিতি আসেনি বলেই সাফ জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক।