ধর্মের গ্রাসে পড়ল দক্ষিণের প্রখ্যাত অম্বুর বিরিয়ানি উৎসব। মেনু থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল বিফ আর পর্ক বিরিয়ানি। খাবার জিনিসে কেন এইভাবে টেনে আনা হল ধর্ম? সেই নিয়ে শুরু হয় চাপানউতোর। আর তার জেরেই নাকি এবারের মতো উৎসবটাই মাটি হয়ে গেল। আসুন শুনে নেওয়া যাক ঘটনাটা।
বিরিয়ানির স্বাদে মজতে চাইবেন না, এমন মানুষ মেলে হাতে গুনে। তার উপর বিরিয়ানি নিয়ে যদি আস্ত একটা উৎসব হয়, তাহলে তো কথাই নেই। এরকম উৎসব আর যেখানেই হোক না কেন, তামিল নাড়ুর অম্বুর বিরিয়ানি উৎসব ধারে ভারে সবাইকেই নাকি টেক্কা দিতে পারে। বলা হয়, অম্বুর বিরিয়ানির স্বাদই নাকি আলাদা। এই উৎসব নিয়ে তাই উৎসাহ উদ্দীপনার অন্ত থাকে না। এবছরও উৎসব হওয়ার কথা ছিল। প্রায় ২০ রকমের বিরিয়ানি চেখে দেখতে পারতেন খাদ্যবিলাসীরা। কিন্তু সে গুড়ে বালি। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে এই আশঙ্কায় নানা চাপানউতোর চলতে চলতে এ বছরের মতো মুলতুবিই হয়ে গেছে বিরিয়ানি উৎসব।
আরও শুনুন: শাহজাহান একা নন, ‘তাজমহল’ বানিয়েছিলেন আরও অনেকেই! কোথায় কোথায় রয়েছে সেগুলি?
আপাতভাবে কারণ দর্শানো হয়েছে অন্য। বলা হয়েছে, ভারী বৃষ্টির আশঙ্কাতেই আপাতত উৎসব বন্ধ রাখা হচ্ছে। কিন্তু এই উৎসব নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছে টানাপোড়েন। আর তার মূলে অবশ্যই আছে ধর্ম। জানা যাচ্ছে, উৎসবের আগে মেনু থেকে বিফ আর পর্ক বিরিয়ানি বাদ দেওয়ার নির্দেশ আসে। তাই নিয়েই যত বিপত্তি। বিফ বা পর্ক বিরিয়ানি উৎসবে রাখা হলে অনেকের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে। এমনটাই মনে করেছিল জেলা প্রশাসন। তাই এই দুই রকমের বিরিয়ানি বাদ দিয়ে উৎসব করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
আরও শুনুন: কেন প্রকাশ্যে স্তন দেখানো হল! খোদ ব্রিটেনে কোপ অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনে
কিন্তু এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি করে। কেন খাবারের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ভেদাভেদের কথা মাথায় রাখা হচ্ছে, এই প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। স্থানীয় অনেকেই বলতে শুরু করেন, অম্বুর বিরিয়ানির মধ্যে বিফ বিরিয়ানির কদরই আলাদা। দীর্ঘদিন ধরেই এই বিরিয়ানি খাচ্ছেন মানুষ। তাহলে এখন হঠাৎ ধর্মে আঘাত লাগতে যাবে কেন? অনেকের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি আসলে উত্তর ভারতের মানুষ। তিনি সেই সংস্কৃতিই দক্ষিণে চালু করতে চাইছেন। তাই ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানি উৎসবের আভিজাত্যই নষ্ট করে দিয়েছেন। বহু অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসে সে রাজ্যের এসসি-এস্টি কমিশন। কমিশনের তরফে একটি চিঠি দিয়ে এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যাও জানতে চাওয়া হয়। কমিশনের তরফে জানানো হয়, এই সিদ্ধান্ত তো রাজ্যের বহু মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ এবং দলিতদের আসলে পৃথক হিসাবে চিহ্নিত করে দিচ্ছে। বিরিয়ানি উৎসব কেন এমন ভেদাভেদের জায়গা হয়ে উঠবে? জানতে চেয়েছে কমিশন। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, উৎসবের মেনু থেকে বাদ দেওয়া হলেও, বিফ বা পর্ক বিরিয়ানি খেতে কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি। কেউ চাইলে বাইরে কিনে তা খেতেই পারেন। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক দল এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল। আবার অন্য কিছু সংগঠনের মত ছিল, এ সিদ্ধান্ত একদিক থেকে ভালো। কেননা অন্যান্য বিরিয়ানিতেও বিফ মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এই চাপানউতোর চলছিলই। আর তার ঠিক পরেই বৃষ্টির কারণ দেখিয়ে বাতিল হয়ে গেল এই উৎসব। যা দেখে অনেকেই বলছেন, ধর্মের কাঁটা এবার খাবার এবং খাবারের উৎসবেও এসে বিঁধল।