কানওয়ার যাত্রায় তীর্থযাত্রীদের মুসলিম ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলার কথা বলেছিল যোগী সরকার। কিন্তু মুসলিমদের সাহায্য ছাড়াই অমরনাথ কিংবা বৈষ্ণোদেবী যাত্রা করে উঠতে পারবেন তো হিন্দুরা? প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। শুনে নেওয়া যাক।
কানওয়ার যাত্রায় মুসলিমদের ছোঁয়াচ বাঁচানো নিয়ে উসকে উঠেছিল বিতর্ক। সেই রেশের মধ্যেই কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, সব তীর্থযাত্রাতেই কি এভাবে মুসলিমদের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলতে পারবেন হিন্দু ভক্তরা? অমরনাথ যাত্রা কিংবা বৈষ্ণোদেবী দর্শনের ক্ষেত্রে যদি তাঁরা মুসলিমদের সাহায্য না পান, সেক্ষেত্রেও কোনও অসুবিধা হবে না তো তাঁদের? এক কথায়, কানওয়ার যাত্রা নিয়ে যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশকেই কটাক্ষ করলেন ওমর আবদুল্লা।
আরও শুনুন:
কানওয়ার যাত্রায় জাতপাতের দ্বন্দ্ব, এদিকে মুসলিমদের তৈরি বাঁক কাঁধে হাঁটছেন ভক্তরা
কানওয়ার যাত্রার পথের ধারে সব দোকানের সামনে মালিকের নাম লিখতে হবে, যোগীরাজ্যের এই নির্দেশ ঘিরে বিতর্ক উসকে উঠেছিল সম্প্রতি। যদিও সুপ্রিম কোর্ট আপাতত এ নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তবে এই নির্দেশের নেপথ্য উদ্দেশ্যটি বুঝতে ভুল হয়নি কারোরই। স্পষ্টতই, খাবারের দোকানের মালিক ও কর্মীদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ্যে নিয়ে আসাই এই নির্দেশের উদ্দেশ্য ছিল। খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও জানিয়ে দেন, তীর্থযাত্রীদের পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত। দোকানদারদের একাংশ নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে নাকি তীর্থযাত্রীদের কাছে খাবার বিক্রি করছিলেন, আর তা রুখতেই এহেন সিদ্ধান্ত। উত্তরপ্রদেশের পর উত্তরাখণ্ড, উজ্জ্বয়িনীতেও একই নির্দেশ জারি হয়েছিল। তবে আপাতত তাতে দাঁড়ি টেনেছে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ। আর সেই সুপ্রিম নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েই এবার হিন্দুত্ববাদী শিবিরের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও শুনুন:
পুণ্যলাভ হিন্দুদের, তবু অমরনাথ যাত্রা শুরু হলেই কেন হাসি ফোটে মুসলিমদের মুখে?
বস্তুত অমরনাথ যাত্রায় ৩৮৮০ মিটার পথ পেরোতে হয় ভক্তদের, যার পুরোটাই পাথুরে চড়াই। প্রবল ঠান্ডা আবহাওয়া পেরিয়ে এই পথ অতিক্রম করেন তাঁরা। ফলে এই যাত্রায় তাঁবু থেকে কম্বল, মালবাহী পশু থেকে গাইড, এমন অনেক কিছুই প্রয়োজন হয়। যাত্রীদের খাওয়ার জন্য পথে খোলা থাকে ভান্ডারা। শীতের সঙ্গে যুঝতে চা-কফির জোগান দিতে হয় তীর্থযাত্রীদের। আর এই সবকিছুরই ব্যবস্থা করেন স্থানীয় কাশ্মীরি মুসলিমরা। বৈষ্ণোদেবী যাত্রার ক্ষেত্রেও এ কথা খাটে। সেখানেও পোর্টার থেকে গাইড, প্রায় সকলেই মুসলিম। ধর্ম আলাদা হলেও, আসলে একে অপরের সহযোগিতাতেই সম্পন্ন হয় এই তীর্থযাত্রা। এইসব দুর্গম স্থানে তীর্থযাত্রার দরুন যেমন রুজিরোজগার করেন ওই মুসলিমেরা, তেমনই আবার তাঁদের সাহায্য নিয়েই দেবদর্শনে পৌঁছতে পারেন ভক্তরা। আসলে শুধু এখানে নয়, সমাজের যে কোনও ক্ষেত্রেই মানুষের একে অপরের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে। গোষ্ঠী বা সমাজ গড়ার মূলে ছিল সেই সহযোগিতার কথাই। সেই সহযোগিতার হাত অস্বীকার করলে আসলে জীবনের পথ চলাই কঠিন হয়। কাশ্মীরের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকা মানুষেরা তো সে কথা জানেনই। কানওয়ার তর্কের প্রেক্ষিতে সেই কথাটিই যেন আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন ওমর আবদুল্লা।